নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:৫৯ পিএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৩:৫৭ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে কোনো শিশু ও নারী নির্যাতনের শিকার না হয়।
তিনি বলেন, কেবল আমাদের দেশে নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও দেখেছি যে, শিশু ও নারীদের ওপর নির্যাতন মানসিক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই নারী-পুরুষ প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনো শিশু ও নারী নির্যাতিত না হয়।
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নে যা যা করণীয় সরকার তা করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘বেগম রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক-২০১৯ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মূলত পুরুষরাই নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তাই তাদের চিন্তা করা উচিত যে, তাদেরও মেয়ে শিশু রয়েছে এবং তাদের সন্তান যদি অন্য কারো দ্বারা নির্যাতিত হয় তাহলে তারা কী করবে। সে কারণেই এ ব্যাপারে সচেতনতা খুবই জরুরি।
নারী-শিশু নির্যাতন রোধে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু আইন দিয়ে সব হয় না। আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি লাভ করে একটা অবস্থান নিয়েছে। ঠিক নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর সমতা সেগুলোর ক্ষেত্রেও কিন্তু আজকে বিশ্বে বাংলাদেশ তার একটা অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটা অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি সারা বাংলাদেশে একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। সেখানে মেয়ে উদ্যোক্তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন, সেটাও আমরা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। সর্বক্ষেত্রে মেয়েরা কাজ করুক সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্দার আড়ালে থাকা নারী এখন অন্ধকার থেকে আলোর পথে চলে আসছে। তারা এখন সমাজের সর্বস্তরে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশের যে সফলতা এর পেছনে নারীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়ারি সার্ভিসে কোনো মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে না- এটা আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সংবিধানে নারীদের যে অধিকার দিয়েছিলেন সেই অধিকারের ফলে নারীরা এখন সর্বত্র এগিয়ে চলেছে। প্রথমে তিনি নারীদের পুলিশে চাকরি দিয়ে নারীর অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন।
খেলাধুলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা খেলাধুলায় এগিয়ে আছে। মেয়েরা ক্রিকেটের স্বর্ণজয় করেছে যা ছেলেরা এখনো পারেনি। মেয়েদের যখন ফুটবল খেলা শুরু হলো তখন সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে বাধা আসে। পরে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে খেলাধুলা শুরু করা হলো। এখন তারাই আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসছে।
নারী পুনর্জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৯তম জন্ম এবং ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সারাদেশে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হচ্ছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা।
মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার স্বাগত বক্তৃতা এবং রোকেয়া পদক বিরণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
রোকেয়া পদক গ্রহণকারীদের পক্ষে বেগম সেলিনা খালেক পদক গ্রহণের অনুভূতি প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নারী ও সামাজিক উন্নয়নে তাদের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিতে পাঁচজন নারীকে রোকেয়া পদক-২০১৯ প্রদান করেন।
পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন বেগম সেলিনা খালেক, অধ্যক্ষ শামসুন নাহার, ড. নূরুন নাহার ফয়জুন্নেছা (মরণোত্তর), মিস পাপড়ি বসু এবং বেগম আখতার জাহান।