রোমান্টিক উপন্যাস কপালকুণ্ডলা

শারমীন কাজী

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৪:৫৬ পিএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৫:০২ পিএম

‘তুমি অধম- তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইবো কেনো?’ এই উক্তিটি শোনেনি এমন বাঙালি বোধহয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল, বাংলা ভাষার পাঠককুল নিশ্চয়ই জানেন সাহিত্যসম্র্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত এই উক্তি। যিনি কমলাকান্ত- ছদ্মনামে লিখতেন। আধুনিক বাংলা উপন্যাসের জনকও তিনি। কপালকুণ্ডলা- ১৮৬৬ সালে রচিত হয়। সেই সময়ে উপন্যাসটি সমালোচক মহলে উচ্চ-প্রসংশাও পায়। কারো কারো মতে, বাংলাসাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাসও এটি। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা এই ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাস নিয়ে নতুন পাঠ বিভাগে লিখেছেন- শারমীন কাজী

বাংলাসাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাসের রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার এ উপন্যাসে জীবনের সার্থক ও পূর্ণচিত্র এঁকে শুধু মানুষ সৃষ্টি করার কথা কল্পনা করেননি, সেই মানুষের আবির্ভাব, বিকাশ ও জীবনাচরণের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির আয়ত্তও তার রচনায় উল্লেখযোগ্য। 

কপালকুণ্ডলায় লেখকের যে অসত্য ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে সত্যমানুষ প্রাণ পেয়েছে, যে ঐতিহাসিক মানুষকে লেখক আবিষ্কার করেছেন, সে মানুষ জীবনের আরোপিত রীতির বিরূদ্ধে ক্রমাগত প্রতিবাদ এবং সংগ্রাম করে চলেছে, সমাজের বাস্তব ভিত্তির ওপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অগ্রসর হয়েছে, সেই মানুষ অবাস্তব ইতিহাসের মধ্যে আশ্চর্য ভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। 

এ উপন্যাসে লেখকের মানস বিবর্তনের ইতিহাসে ‘কপালকুণ্ডলা’ কাহিনীর তেমন বিশেষ কোনো অবদান নেই, কিন্তু এই উপন্যাসেই তার সাহিত্যকৃতির অপূর্ব দক্ষতার পরিচয় মেলে। লেখকের ভাষা এই উপন্যাসে এমন একটি সাবলীল গতি ও তারুণ্য লাভ করেছে যে, অতি সহজ ও সূক্ষ্ম স্পর্শে তিনি গভীর আবেদন ও ভাবের সৃষ্টি করেছেন এবং মুক্তির চরমস্তরে পৌঁছেছেন। ভাষার মুক্তির সঙ্গে লেখক তার কাহিনির স্থির লক্ষ্যের প্রতি সমস্ত ঘটনাকে কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা আয়ত্ত করেছেন।

প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদ যেন খ- খ- ঝর্ণাধারার মতো অনিবার্য গতিতে সাগরে মিলিত হয়েছে। নেই অকারণ পথ চাওয়া অথবা যাত্রার পথে অকারণ বিশ্রাম। সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত, সংগঠিত।

এছাড়া এই গ্রন্থের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এর প্রধান চরিত্র কপালকুণ্ডলা। বহু বিচিত্র রঙ এবং পরস্পর-বিরোধী গুণের সমন্বয়ে লেখক এই চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। এখানে বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার, রসের সঙ্গে কাঠিন্য, জীবনের গদ্যের সঙ্গে পদ্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে, প্রচলিত জীবনধারার সঙ্গে অপ্রচলিত, সমাজের বাইরের জীবনের অপরিচিত মাধুর্য, শান্ত সংযত দৃঢ়তার সঙ্গে স্বাধীনতা ও মুক্তির, জীবনের অভিজ্ঞতা সংগ্রহের স্বাক্ষর পাওয়া যায়, রোমান্সের সেই বিষয়মুখিতার স্বাভাবিক স্বাক্ষর থাকে না।

এখানে কেবল লেখকের নিজের ভঙ্গিতে পৃথিবীকে রঙিন করার প্রাধান্যই প্রধান। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার রোমান্স ও লেখনীতে জীবনের সুখ-দুঃখ দু’য়ের সামঞ্জস্য দেখাতে চেয়েছেন। তাই তার রোমান্স ও উপন্যাস কাব্য ও কাহিনীতে স্থিতি লাভ করেছে। কাহিনী কালে বিস্তৃত, কাব্য তুলনায় কালের অতীত। তিনি কালকে কালাতীত ও কালাতীতকে কালে প্রতিষ্ঠিত করে এই উপন্যাসে সেই নিখুঁত চিত্র এঁকেছেন। এই সংমিশ্রণের ভিতর দিয়েই কপালকুণ্ডলা জীবনের বাস্তব রূপ ও কল্পনার আদর্শ পরস্পরকে আলিঙ্গন করে প্রাণ পেয়েছে, রচিত হয়েছে এক অনবদ্য উপন্যাস।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh