প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২০, ১০:৩১ পিএম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার নাম বার বার আসছে; কিন্তু সম্প্রতি ঢাকার নাম এসেছে বিশ্বের এক নম্বর বায়ুদূষণের শহর হিসেবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে বায়ুদূষণকে বিশ্বের এক নম্বর ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর শুধু বায়ুদূষণের কারণেই ৪২ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে শুধু হাঁপানি ও ফুসফুসের নানা সমস্যায় প্রতি বছর দুই লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।
মূলত ঢাকার চারপাশে ইটভাটা, নিয়ন্ত্রণহীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, নির্মাণকাজের ধুলাবালি, শিল্প-কারখানা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও ভারী ধাতু এখানকার বাতাসকে দূষিত করছে। তাছাড়া ঢাকায় রাস্তার ধুলায় সর্বোচ্চ পরিমাণে সিসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ গবেষণায়। মাটিতে যে মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকার কথা, ধুলায় তার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। আর নিকেল ও সিসার মাত্রা পাওয়া গেছে দ্বিগুণেরও বেশি। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার রাস্তার ধুলার মধ্যেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক শনাক্ত হয়েছে।
নিকেল ও ক্যাডমিয়ামের তৈরি প্রচুর ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢাকা শহরে চলাচল করছে। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ব্যাটারি তৈরির অপরিকল্পিত কারখানা। এসব কারখানায় সংকর ধাতু ও ধাতব প্লেট তৈরি এবং এনামেল, প্লাস্টিক ও রঙের কাজে ক্যাডমিয়াম ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকা শহর এবং এর আশপাশে গড়ে ওঠা অনেক ট্যানারি ও ডাইং শিল্প মূলত এই উচ্চমাত্রার ক্রোমিয়ামের উৎস।
এসব কারণে রাজধানী ঢাকার বাতাস ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ঢাকা এমনিতেই দেশের অন্যান্য শহরের চেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ। ঢাকার বায়ুদূষণের কাহিনি নতুন কিছু নয়; কিন্তু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে পৌঁছানোর আগেই সরকারকে এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নতুবা আমরা সামনে বায়ুদূষণের মহামারিতে পড়ে যেতে পারি। তাই ফিটনেসবিহীন গাড়ি অবৈধ ঘোষণা করতে হবে, শিল্প কারখানাগুলোতে পরিবেশসম্মত উপায়ে পরিচালনার সব আইন কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিতে হবে।