লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের নাভিশ্বাস

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২০, ১০:৩৭ পিএম

ঢাকার যেসব রাস্তা সিএনজি, রিক্সার আনাগোনা লেগে থাকতো, অথবা যেসব গলিতে ফেরিওয়ালার ডাকে সরগরম থাকতো সকাল- দুপুর, সেখানে এখন নীরবতা। বড় সড়ক বা অলিগলিতেও রিক্সা বা সিএনজির দেখা মেলে না। একই চিত্র জেলাশহর বা উপজেলা শহরেও।

ঢাকার কয়েকজন রিকশাচালক, সবজি বিক্রেতা বলেন,  অবস্থা খুব খারাপ। স্কুল-কলেজ ছুটির পর থেকেই আমাদের বাজার খারাপ। এখন তো রাস্তায় লোকজনই নেই, আমাদের আয়ের উৎস নেই। আমাদের সিএনজিও চালাতে দেয় না। আমাদের তো আর জমানো টাকা থাকে না। বাড়ি ভাড়া দিতে হয়, খাবার জোগাড় করতে হয়, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বহুত কষ্টে আছি।

দেশে গত তিনদিন ধরে অঘোষিত লকডাউনে জনজীবন থমকে গেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্কুল কলেজ, অফিস আদালত বন্ধ করে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর সবাইকে ঘরের ভেতরে থাকার আহবান জানিয়েছে সরকার, যা আরো সাতদিন ধরে চলবে। কিন্তু এই লকডাউনের ফলে বিপদে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা, যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।

তবে করোনাভাইরাসের কবল থেকে রক্ষা পেতে এই কষ্টটুকু মেনে নিচ্ছেন মানিকগঞ্জের সবজি চাষী কমল চোকদার। তিনি বলছেন, সবজি বিক্রি কমে গেছে, কারণ দূরের কোন পাইকার আসছে না। দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু তারপরেও সমস্যাটা মেনে নিয়েছি। করোনাভাইরাস নিয়ে যে অবস্থা তাতে যদি আমরা একটু নিরাপদে থাকতে পারি, তাহলে এই অসুবিধা হলেও সেটাকে অসুবিধা মনে করছি না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬শে মার্চ থেকে চৌঠা এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সরকার। এই সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে সেনা সদস্যরাও।

এ সময়ে বেকার হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য ও অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যা স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বিতরণ করার কথা।

কিন্তু ঢাকার বাইরে অনেক জেলা উপজেলা, ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি বরাদ্দ যেতে শুরু করলেও, তা এখনো অপ্রতুল। অনেক স্থানে কোন বরাদ্দই পাওয়া যায়নি।

মানিকগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ইসরাফিল হোসেন বলছেন, কিছু চাল ও অর্থ সাহায্য এসেছে। কিন্তু দরকারের তুলনায় তা অপর্যাপ্ত।

কুড়িগ্রামের একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল হক দুলাল বলছেন, তার এলাকায় এখন পর্যন্ত কোন সাহায্য যায়নি।

প্রান্তিক এই মানুষদের সহায়তা করার জন্য ঢাকার মতো অনেক স্থানে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা। তারা নিজেদের মতো করে নিম্নআয়ের মানুষজনের মধ্যে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা করছেন।

বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলছেন, অনেক জায়গায় পর্যাপ্ত সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি তারাও জানতে পেরেছেন। তবে তারা সব জায়গায় চাহিদামত খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছেন।

তিনি বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে কর্মহীন মানুষের কোন খাদ্যকষ্ট না হয়। এর মধ্যেই ২৪ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টাকাও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেরকম চাহিদা আসছে, সেই অনুযায়ী আমরা বরাদ্দ দিচ্ছি।

কিন্তু অনেক স্থানেই যথেষ্ট বরাদ্দ না পাওয়া বা একেবারেই বরাদ্দ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক নিম্নআয়ের মানুষ বলছেন, তারা কোন সহায়তাই পাননি।

এই প্রসঙ্গে এনামুর রহমান বলেন, এটাও সত্য যে শতভাগ জায়গায় খাদ্য সহায়তা পৌঁছেছে বলবো না, আমাদের কাছেও এই অভিযোগ এসেছে। যে জেলা থেকে অভিযোগ এসেছে, সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা করছি।

তিনি বলেন, সারা দেশব্যাপী কর্মকাণ্ড, একদিনেই সেটা শতভাগ মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন হবে। আস্তে আস্তে সেটা কভারেজের আওতায় চলে আসবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh