সাফওয়ানা জাবীন
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১০:০৫ এএম
হোম কোয়ারেন্টিনের বাংলা অর্থ স্বেচ্ছায় সঙ্গরোধ; কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের বেশিরভাগই মানছেন না হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ। এ জন্য বিভিন্ন স্থানে জরিমানাও করছে স্থানীয় প্রশাসন; কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকেই।
হোম কোয়ারেন্টিনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশাবলি:
১. অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নিজের বাড়িতে থাকুন।
২. হাসপাতাল বা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবেন না। অর্থাৎ বাড়ির বাইরে কাজে, স্কুল-কলেজ বা জনসমাগমে যাওয়া বন্ধ রাখুন।
৩. বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন। আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন।
৪. তা সম্ভব না হলে, অন্যদের থেকে অন্তত এক মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন (ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন)।
৫. যদি সম্ভব হয় তাহলে আলাদা টয়লেট ব্যবহার করুন।
৬. শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
৭. আপনার সঙ্গে কোনো পশু-পাখি রাখবেন না।
৮. মাস্ক ব্যবহার করুন।
৯. বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে থাকলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
১০. মাস্ক পরে থাকলে বারবার তাতে হাত দেবেন না।
১১. মাস্ক ব্যবহারের সময় সর্দি, কাশি, বমি ইত্যাদি হলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন।
১২. মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও অন্যান্য সতর্কতা
১৩. হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
১৪. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
১৫. হাত ধুয়ে টিস্যু দিয়ে মোছার চেষ্টা করুন। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে/গামছা ব্যবহার করুন এবং ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।
১৬. হাঁচি বা কাশির সময় মুখ ঢাকুন।
১৭. কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার, মেডিকেল মাস্ক, কাপড়ের মাস্ক বা বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং উপরের নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করুন।
১৮. টিস্যু পেপার ও মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলুন।
১৯. ব্যক্তিগত ব্যবহার্যসামগ্রী অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।
২০. আপনার খাওয়ার বাসনপত্র- থালা, গ্লাস, কাপ, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।
২১. সবকিছু ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।
২২. কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে, খাবার তৈরির আগে ও পরে এবং খাবার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে, গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে, যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হয় তখনই হাত ধুয়ে ফেলুন।
২৩. খালি হাতে কুয়ার্যান্টিনে থাকা ব্যক্তির ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।
হোম কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোয়ারেন্টিনের সময় শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মতে, একজন হতে অন্যজনের কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।
কোয়ারেন্টিনে থাকাকালে সতর্কতা
১. কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি বা অন্য আবর্জনা ওই রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এ সব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।
২. ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করুন।
৩. পরিষ্কারের জন্য এক লিটার জলের মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে ঘরের সর্বত্র ছড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন একদিনের বেশি ওই পানি ব্যবহার করবেন না।
৪. কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান বা কাপড়কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং পরে ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন।
৫. নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রিব্যাগে আলাদা রাখুন।
৬. স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল এবং আইইডিসিআর-এ যোগাযোগের প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরগুলো সংগ্রহে রাখুন।