মাগফিরাতের দশক শুরু

মহান আল্লাহ বান্দার জন্য রেখেছেন অফুরন্ত ক্ষমার ভান্ডার

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২০, ০৮:৩৯ এএম

দেখতে দেখতে রমজানের প্রথম দশক শেষ হয়ে আজ দ্বিতীয় দশকের প্রথম দিন। দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের দশক। 

মাগফিরাতের এই দশকে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রেখেছেন অফুরন্ত ক্ষমার ভান্ডার। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম (গুনাহ) করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ ( সুরা আয -যুমার ৫৩)

এই আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের যেন এটাই আশ্বস্ত করেছেন যে রমজানের রহমতের দশক শেষ হয়েছে তো কী হয়েছে, আল্লাহর  রহমত তো ফুরিয়ে যায়নি, এমনকি আল্লাহ বান্দার সব গুনাহ মাফ করার কথা বলেছেন। 

অন্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘তারা আল্লাহর কাছে তওবা  করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন?  আল্লাহ যে ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা মায়িদা- ৭৪) তওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা দ্বারা আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক মজবুত হয়। 

রাসুল (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ১০০ বার করে ইস্তেগফার করতেন। রাসুল সা: বলেন, ‘আমি তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেব। তোমরা ইস্তেগফার করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব (মুসলিম)।’

সিয়াম সাধনার মধ্যে কোনোরকম ভুলত্রুটি হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তওবা ও ইস্তেগফার করে নিজেদের সংশোধন করে নেয়া দরকার। আল্লাহ বলেন, 'আর তিনিই (আল্লাহ) তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন (সূরা আশ শুরা :১৫)’

আবু সাঈদ খুদার (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কেউ রমজানের প্রথম দিন রোজা রাখে তখন তার পূর্বেকার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। এমনিভাবে রমজান মাসের সমস্ত দিন চলতে থাকে এবং প্রতিদিন তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সকালের নামাজ থেকে শুরু করে তাদের পর্দার অন্তরালে যাবার আগ পর্যন্ত তার ক্ষমার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (কানযুল উম্মাল, কিতাবুস সওম)।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতা রোজাদারের জন্য দিন-রাত এস্তেগফার করতে থাকে।’ (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ)। এছাড়া হাদিসে এ বিষয়ে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, আব্দুর রহমান বিন আওফ (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াব ও এখলাসের সাথে ইবাদত করে সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায় যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম লাভ করেছিল।’ (সুনানে নিশাই, কিতাবুস সওম)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন ক্ষমাশীল। বিভিন্ন উছিলায় বান্দাদের ক্ষমা করতেই চান তিনি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, এবং জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম সহনশীল (বাকারা : ২৩৫)।

মহান রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে তোমাদের রবই অধিক জ্ঞাত। যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৫)।

 অনেকেরই কোরআনের আয়াত পাঠেও মনে ভয় আসে না। কারণ আমরা যে দুনিয়াপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কাম, অবৈধ প্রতিযোগিতা আর লোভ-লালসা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি না। আর এ সমস্যাগুলো হয় মূলত কোরআন না বুঝে কেবলই যন্ত্রের মতো পাঠ করার কারণে। কিছু পাপ আমরা অতি গোপনেও করি, যে পাপের কোনো সাক্ষী নেই। কিন্তু এসব পাপের জন্য আমরা কি কখনো অনুতাপ বা অনুশোচনা করি? 

ইমাম বুখারি রচিত আল মুফরাদ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, জিবরাইল (আ.) এসে নবীজিকে (সা.) বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারল না। তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘আমিন’। 

আমাদের মনে রাখা দরকার, যে বিষয়ে মহানবী (সা.) দোয়া করেছেন তা কখনো বিফলে যাবে না। তাই আমাদের মাগফিরাতের এ দশকে সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ বিদায় নিয়েছে রহমতের প্রথম দশক। আমাদের ভেবে দেখা দরকার, আত্মশুদ্ধি অর্জনে আমরা নিজেদের কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছি।

তাই আসুন, মাগফিরাতের এ দশকে বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করি, মহান মাবুদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে কোরআন-হাদিস নির্দেশিত পথে চলার মধ্য দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হই। হে দয়াময়, হে ক্ষমাকারী, আমাদের রমজানের মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত লাভ করার তওফিক দান করুন, আমিন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh