করোনাভাইরাসের দুর্ভোগ
সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২০, ০২:১১ পিএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২০, ০৩:০২ পিএম
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে খাগড়াছড়িতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে বেসরকারি শিক্ষকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।
আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ননএমপিও স্কুল-মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ। সামাজিক মর্যাদার কারণে অনেক শিক্ষক ত্রাণ নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না। এই অবস্থায় তিন পার্বত্য জেলার ছয় হাজার শিক্ষক ও কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি শিক্ষক সমিতি সূত্র মতে, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় এমপিও, ননএমপিও স্কুল, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা প্রায় ৮ শতাধিক। এতে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী। করোনাভাইরাসের কারণে ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে সরকার। প্রায় তিন মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
ননএমপিও স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনের আয়ের উৎস শিক্ষার্থী বেতন ও পরীক্ষার ফি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের ফি আদায়। এতে আয়ের বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন ভাতা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের তহবিলেও অর্থ সংকট থাকায় বন্ধকালীন সময়ে কোনো সহায়তা করছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
করোনকালে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও শিক্ষকদের সামাজিক মর্যদার কারণে ত্রাণের জন্যও লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না তারা।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মাইনী কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক জেসমিন চৌধুরী বলেন, তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীদের বেতন ভাতা আদায় বন্ধ রয়েছে। আয় না থাকায় বেসরকারি শিক্ষক ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের বেতন ভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকে ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছে না। বিশেষ করে সামাজিক মর্যদার কারণে অনেকেই ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না।
অনেক বেসরকারি শিক্ষকরা পান না পাহাড়ি ভাতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক ভাতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। বেতন পেলেও তা পর্যাপ্ত নয় । এই অবস্থা পাহাড়ের শিক্ষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণোদনা প্যাকেজ দাবি করেছেন শিক্ষকরা।
বেসরকারি শিক্ষক সমিতির তিন পার্বত্য জেলার প্রধান সমন্বয়ক উষ্মাআলো চাকমা বলেন, পার্বত্য জেলায় ৮ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬ হাজার শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। পাহাড়ের শিক্ষকদের পাহাড়ি ভাতা বন্ধ ,আবার অনেকে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। করোনার কারণে মানবেতর দিন পার করছে অনেকে।
জেলায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে স্বীকার করে মানবিক কারণে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাধন কুমার চাকমা।
তিনি বলেন, জেলায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো ননএমপিও। তাদের বেতন ভাতা বন্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই দুর্যোগে মানবিক কারণে শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।