প্রত্যেক নাগরিকের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ০৮:৫৫ এএম

স্থবির হয়ে পড়া দেশের অর্থনীতিতে যেখানে মানুষের অন্ন সংস্থান করাই কঠিন হয়ে পড়েছে, সেখানে করোনার চিকিৎসা আক্রান্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আওতার বাইরে চলে গেছে। লকডাউন শিথিল করার পর প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা জারি করে। সেখানে ৫০ ও এর বেশি শয্যাসংখ্যার প্রত্যেকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে বলা হয়েছে।

আদেশে করোনার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা দেয়া হয়নি। বরং বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা ব্যয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে একজন কভিড-১৯ রোগীর ১১ দিনের চিকিৎসা ব্যয়ের বিল এক লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যায় ভর্তি হওয়ার পর অক্সিজেন কিংবা আইসিইউ সাপোর্ট এবং কোনো অস্ত্রোপচার করা না হলেও কেবল দুটি এক্স-রে ও দু’বার রক্ত পরীক্ষা এবং ওষুধ হিসেবে নাপা ও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট সেবন করার পরও ওই অঙ্কের বিল করা হয়।

এর আগে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পর সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, বসুন্ধরা গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী হাসপাতালগুলোর পরিচালন ব্যয় সরকার বহন করবে; কিন্তু নতুন জারি করা নির্দেশনায় এ বিষয়টির উল্লেখ নেই।

ফলে সরকারি এবং বেসরকারি এই দুই ধরনের চিকিৎসা নীতির কারণে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যদিকে দরিদ্রদের উচ্চমূল্যে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের পক্ষে চিকিৎসা গ্রহণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আমরা মনে করি সরকারকে প্রত্যেকটি নাগরিকের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগকালে চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার এভাবে বেসরকারি খাতের ওপর ছেড়ে দিতে পারে না। বরং বেসরকারি খাতের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করতে হবে। দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষ চিকিৎসার নাগালের বাইরে থাকলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh