চিরসবুজ সম্রাজ্ঞী ম্যাডোনা

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২০, ০৩:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ জুন ২০২০, ০৩:২৫ পিএম

ম্যাডোনা।

ম্যাডোনা।

ম্যাডোনার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক স্বর্ণকেশীর অবয়ব, যিনি দীর্ঘদিন ধরে শাসন করে আসছেন পৃথিবীর পপ সংগীতাঙ্গন, যার সৌন্দর্য আর হাসি নিমেষেই ষাটোর্ধ্ব বয়স লুকিয়ে ফেলে তাকে নিখুঁত আবেদনময়ী তরুণীর তালিকাভুক্ত করে ফেলে।

আর এই সৌন্দর্যই হয়তো তার হাঁটুর বয়সী তরুণদেরও তার প্রতি দুর্বল করে দেয়। তিনিও কম যান না, বয়সের তফাৎ ভুলে বরাবরই হাঁটুর বয়সী তরুণদের কখনো স্বামী আবার কখনো প্রেমিকের স্বীকৃতি দিয়ে ফেলেন অবলীলায়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ২০১৮ সালে ষাটোর্ধ্ব এই নারী মজেছিলেন ২০ বছর বয়সী এক তরুণের প্রেমে। ভাবছেন আজকের বিষয় এই চির তরুণী গায়িকার প্রেম উপাখ্যান? আজকের বিষয় এই চিরসবুজ সম্রাজ্ঞীর জীবনের উপাখ্যান।



পুরো নাম ম্যাডোনা লুইস ভেরোনিকা। ম্যাডোনা ১৯৫৮ সালের ১৬ আগস্ট মিশিগানের বে সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন প্রকৌশলী আর মা ছিলেন এক্স-রে টেকনিশিয়ান ও নৃত্যশিল্পী। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ম্যাডোনা ছিলেন তৃতীয়। তবে শৈশবটা সুখের ছিল না ম্যাডোনার। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ছোট্ট ম্যাডোনাকে মুখোমুখি হতে হয় জীবনের সবচেয়ে নির্মম শোক ও বাস্তবতার। আর তা হলো, মাতৃবিয়োগ।

মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে ম্যাডোনার মা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আর সেই সঙ্গে ম্যাডোনারও বিভীষিকাময় শৈশবের শুরু হয়। সৎ মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না ম্যাডোনার। তার যে কাজগুলো অপছন্দ সৎ মা সেগুলোই তাকে করতে বাধ্য করতেন। বিভিন্ন ধর্মীয় আচার প্রথা চাপিয়ে দিতেন ম্যাডোনার ওপর যা তার মোটেই পছন্দের ছিল না। ছাত্রীবস্থায় ম্যাডোনা ছিলেন একজন ড্যান্সার ও চিয়ার লিডার। নাচের ওপর বেশ দক্ষতা ছিল তার।


আর এই দক্ষতাই তাকে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের দৃষ্টি কাড়তে সহায়তা করে। স্কুল গ্র্যাজুয়েট করা অবস্থাতেই অসম্ভব নৃত্য দক্ষতার কারণে তাকে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান থেকে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি প্রদান করা হয়। নাচের ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভেবে মাত্র দুই সেমিস্টার শেষ করেই ম্যাডোনা পড়াশোনা ছেড়ে দেন। আজ যিনি দুনিয়া কাঁপানো গায়িকা, যিনি চাইলেই পারছেন অসম্ভব বিলাসী জীবনযাপন করতে সেই ম্যাডোনা নিউইয়র্কে এসে জীবনধারণ করতে বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন পেশা। সেসময় জীবিকা নির্বাহের তাগিদে কখনো তিনি ন্যুড পেইন্টিংয়ের মডেল হয়েছেন, কখনো ক্লাবে নেচেছেন আবার কখনো টি রুমে ওয়েটার হিসেবেও কাজ করেছেন। 

১৯৭৯ সালে ম্যাডোনার সঙ্গে আলাপ হয় গিলরয়ের সঙ্গে। গিলরয় ছিলেন সেসময়ের একটি পরিচিত ব্যান্ড ব্রেকফাস্ট ক্লাবের সদস্য। এ সময় ম্যাডোনা ফ্রান্সের একটি থিয়েটারে শো গার্লের কাজ করতেন। শো গার্লের কাজ করার সময় ম্যাডোনার জীবনে আসে প্রথম প্রেম, যার সঙ্গে আজও একসঙ্গে বসবাস করছেন। ম্যাডোনার এই প্রেমের নাম সংগীত। শো গার্লের কাজ করার সময় নাচের পাশাপাশি সংগীতের প্রতিও আগ্রহ বোধ করতে থাকেন। 


সংগীতের প্রতি এই আগ্রহ থেকেই ১৯৮০ সালে ম্যাডোনা ড্রামার হিসেবে যোগদান করেন গিলোরির ব্যান্ডে; কিন্তু যার কণ্ঠের কারুকাজে একদিন বুঁদ হয়ে যাবে সারাবিশ্ব, তাকে কি আর মাইক্রোফোন ফেলে ড্রামস নিয়ে বসে থাকলে চলে? ড্রামার হিসেবে যোগদান করলেও পরবর্তীতে ব্যান্ডটির লিড ভোকালের জায়গাটি দখল করে নেন ম্যাডোনা। গায়িকা হিসেবে যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, ঠিক তখন তিনি তার সাফল্যের মুকুটে যোগ করেন আরেকটি পালক।

তবে তা গান দিয়ে নয়, অভিনয় দিয়ে। তিনি অভিনয় করেন ডেসপারেটলি সিকিং সুসান নামক একটি ছবিতে এবং এখানেও তিনি দেখা পান সফলতা নামক সোনার হরিণের। এতদিন জার্নিটা শুধু গান নিয়ে হলেও এবার সঙ্গে যোগ হয় অভিনয়। ঠিক যেন দুই নৌকায় পা দিয়ে সফলতার লাগাম ধরে তরতর করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন ম্যাডোনা। একের পর এক হিট অ্যালবাম আর সিনেমা তার সেই সফলতার সাক্ষী হতে থাকে। আর এভাবেই রচিত হতে থাকে পৃথিবীর এক পপ কিংবদন্তির গল্প, যিনি একাধারে একজন সফল গায়িকা, একজন পারফর্মার এবং একজন অভিনেত্রী।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh