জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২০, ০৭:১২ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০, ০৯:৩১ পিএম
জামালপুরের সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নে বড়বাড়ি থেকে তেমাথা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে কোনো কাজ করা হয়নি।
জামালপুর সদর উপজেলায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের কাবিখা প্রকল্পে কাজ না করেই অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসন অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বললেও তা লক্ষ্য করা যায়নি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণ (কাবিখা) ২য় পর্যায় নন-সোলার প্রকল্পের জন্য জামালপুর সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়নের ১২টি প্রকল্পের জন্য ১৬০.৫৫৫ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতি কেজি ৩৩ টাকা দরে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫ টাকা। চলতি বছরের জুন মাসে সকল প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নারিকেলি বড়বাড়ি থেকে তেমাথা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ০৯ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। সরাকরি দরে ০৯ মেট্রিক টন গমের মূল্য দাড়ায় ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
জুন মাসে কাজটি কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৪ জুলাই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো কাজ করা হয়নি এবং রাস্তার বেহাল অবস্থার কারনে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা।
সেখানকার বাসিন্দা ফজলুল হকের পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, গত ৪-৫ বছর যাবত বড়বাড়ি থেকে তেমাথা পর্যন্ত রাস্তার কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে তারা। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারনে মাঝেমধ্যেই দূর্ঘটনা ঘটে। বর্ষাকালে এই ভোগান্তির মাত্রা আরো বেড়েযায়।
একই এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সুরুজ্জামান বলেন, রাস্তাটির কাজ করা হয় না অনেকদিন। আমরা শুনি যে অনেক বরাদ্দ আসে, কিন্তু সেগুলোর কোনো কাজ দেখি না। এ বিষয়ে প্রকল্পটির সভাপতি ও কেন্দুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর
রহমান মঞ্জুর কাছে জানতে ৪ জুলাই দুপুরে পরিষদে গেলে তিনি জানান, এ প্রকল্পের বিষয়ে তার জানা নেই এবং পরের দিন যোগাযোগ করতে বলেন।
৫ জুলাই বেলা ১২ টায় আবার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন এবং ৪০মিনিট অপেক্ষা করার পরও তিনি এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন কর্মচারী জানান, চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জু উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশ করে প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন করেছেন।
এদিকে শরিফপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ডেংগার গড় হুছির বাড়ি থেকে সুরুজ বাজার হয়ে সিংগাবিল পর্যন্ত রাস্তা পুন:সংসস্কারের জন্য ২৪ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি দরে ২৪ মেট্রিক টন গমের মূল্য দাড়ায় ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৬ জুলাই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো কাজ করা হয়নি এবং রাস্তার বেহাল অবস্থার কারনে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে সেখানকার বাজার এলাকার বাসিন্দারা।
সুরুজ বাজার এলাকার মৃত ঈমান আলীর ছেলে হুসেন আলী জানান, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে বাজারে ক্রেতা খুব কম আসে। তাই ব্যবসায়ীদের অনেক খারাপ অবস্থা। ব্যবসার কাজে ভারী মালামাল পরিবহনেও অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
সিংগার বিল এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে লিটন মিয়া জানান, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে কোনো কাজই ঠিকমতো করা যায় না। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তা সংস্কারের দাবি নিয়ে এলাকাবাসী কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির সভাপতি ও শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলম আলী জানান, প্রকল্পের কিছু কাজ করা হয়েছে। সামনে আরো কাজ করা হবে। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
অপরদিকে শাহবাজপুর ইউনিয়নের বাঁশচড়া এসবিজি মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ৯ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি দরে ৯ মেট্রিক টন গমের মূল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। স্কুল মাঠে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও কোনো কাজ করা হয়নি। তবে কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বাঁশচড়া এসবিজি মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্পটির জন্য অনেক আগে বরাদ্দ এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ না পাওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে তিনি জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন জানান, অনিয়মের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে প্রকল্পে কাজ কম করা হয়েছে প্রয়োজনে সেখানে আবার কাজ করানো হবে।
নিম্নমানের কাজ ঠেকাতে এবং প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির জন্য উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত তদারকি করছে বলেও জানান তিনি।