তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২০, ০৭:৩০ পিএম

অবিরাম বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি রবিবার (১২জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, গত শুক্রবার রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরদিন শনিবার পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২টার পর আবারো পানি বেড়ে বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ২৮সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। 

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রবিবার (১২জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত রেকোর্ড করা হয়। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও ব্যারাজ রক্ষার্থে গত শনিবার থেকে ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে নদী পাড়ের মানুষ।

দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার আদিতমারী, কালিগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও সদর উপজেলার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। জেলার ৫ উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

এর মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে-সাথেই কালীগঞ্জ উপজেলার নোহালী, চর বৈরাতী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, গোরবর্ধন, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি, রাজপুর, গোকুন্ডা ও তিস্তা এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

এছাড়া পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের ৯৫টি বাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে জেলার ধরলা নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে নদী পাড়ের মানুষ।

তিস্তা নদীর বাম তীরে পানিবন্দি পরিবারগুলোর হাহাকার বেড়ছে। তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। চৌকি/খাটের উপর মাচাং বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি পরিবারের মানুষগুলো। কেউ কেউ ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ বা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। খুব কষ্টে পড়েছেন বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা। গবাদি পশু-পাখি নিয়েও চরম বিপাকে পানিবন্দি পরিবারগুলো। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়।

এছাড়া তিস্তার বামতীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব বাঁধ ভেঙে গেলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যেতে বলেও শঙ্কিত তিস্তাপাড়ের মানুষ। গত শুক্রবার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী হাসপাতাল সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। স্থানীয়রা নিজেরাই বালুর বস্তা দিয়ে পানি প্রবাহ থেকে সড়কটি রক্ষা করে। এটি ভেঙে গিয়ে বিগত ১৭ সালের বন্যায় লালমনিরহাট বুড়িমারী রেললাইন ভেঙে হাতীবান্ধা শহরে পানি প্রবেশ করে। সেই সংস্কার করা সড়কটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রবিবার (১২জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত রেকোর্ড করা হয়েছে। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও ব্যারাজ রক্ষার্থে গত শনিবার থেকে ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় স্বল্প পানিতেই জেলায় বন্যা দেখা দেয়। নদী খনন করে দুই তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একনেকে অনুমোদন হলেই লালমনিরহাটবাসী বন্যা থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাবে।

তিনি বলেন, চলমান বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। 

পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh