ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৪:৫১ পিএম
টানা দুই দিনের বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর ৬ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ১৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গতকাল রবিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল এবং আজও বন্যাপ্লাবিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ইয়াছমিন আক্তার।
বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আরো বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, পুকুর প্লাবিত হয়েছে। একদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব, তার ওপর এ দুর্যোগের আর্বিভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ১৩টি গ্রামের হাজারো মানুষ।
ফুলগাজী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, রবিবার সন্ধ্যার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী সদর অংশের উত্তর দৌলতপুরের ৩টি স্থানে ও কিসমত ঘনিয়া মোড়া গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ইউনিয়নের ঘনিয়া মোড়া, কিসমত ঘনিয়া মোড়া, পুর্ব ঘনিয়া মোড়া, উত্তর দৌলতপুর, বৈরাগপুর, সাহাপাড়া, উত্তর বরইয়াসহ অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া ফুলগাজী বাজারের পশ্চিম অংশে শ্রীপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে ফুলগাজী উপজেলা সদরের মূল সড়কও তলিয়ে গেছে। এতে ৭শ’র বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের দুটি অংশে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ২টি স্থানে ভেঙে ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি জানান, রবিবার সন্ধ্যার দিকে ইউনিয়নের দূর্গাপুরের কালাম মেম্বারের বাড়ির পাশে ও দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের (সাবেক) বাড়ির পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুইটি অংশ ভেঙে দুর্গাপুর, রতনপুর, রামপুর, দক্ষিণ শালধর, মালিপাথর ও পাগলীরকুল, উত্তর ধনীকুন্ডা, মধ্যম ধনীকুন্ডা, রাজষপুর, উত্তর শালধর, নোয়াপুরসহ আরো কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে চিড়া আর মুড়ির বদলে টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দাবি জানিয়ে আসছেন দুই উপজেলার স্থানীয়রা। প্রতি বছরই পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় কোটি টাকায় নির্মিত মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বাঁধ। এসব বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। প্রতি বছর এমন হলেও স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ সীমাহীন।
স্থানীয়রা জানান, বন্যায় পানিবন্দী হলে অনেকে চিড়া-মুড়ি নিয়ে আসে। কেউ টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধানের কথা বলেন না।
এদিকে আজ সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ফেনী জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান প্লাবিত কয়েকটি অঞ্চল পরিদর্শন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুলতানা নাসরিন কান্তা, ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, বিআরডিবি চেয়ারম্যান মো: সেলিম স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।