এবার ভিন্ন আয়োজনে হজ

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২০, ০৬:১৬ পিএম

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লাব্বায়েক লা শারীকা লাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা ওয়া নি’মাতা, লাকা ওয়াল মূলক, লা শারীকা লাকা...। 

এ গগনবিদারী আওয়াজ ধ্বনিতে এখন মুখরিত পবিত্র মক্কা নগরী ও এর আশেপাশের এলাকা। যদিও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবার অন্যরকম হজ উদযাপিত হচ্ছে। করোনার কারণে মুসলমানদের অন্যতম ফরয এবাদত হজ নিয়েই ছিলো শংকা। কিন্তু সবকিছুর শংকা কাটিয়ে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ঘর কাবা এখন মুখরিত আল্লাহর বান্দাদের গগণবিদারী ধ্বনিতে। 

এবার অল্প পরিসরে হজ উদযাপিত হচ্ছে। পবিত্র ঘর কাবা তাওয়াফ করে দোয়া পড়তে পড়তে খোদা তায়ালার দরবারে পৌঁছার স্বীকৃতি জানাচ্ছে, স্বীকার করে নিচ্ছে দুনিয়া ও জীবনের সবকিছুর উর্ধ্বে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, সর্বত্র তাঁরই রাজত্ব ও প্রাধান্য। 

এ বছর অবশ্য করোনা মহামারির কারণে বাইরের দেশ থেকে হজ করতে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। এ সুযোগ পাবেন শুধু সৌদি আরবের বাসিন্দা ও দেশটিতে বসবাসরত বিদেশিরা। এক হাজারেরও কম মানুষের অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে মুসলমানদের বার্ষিক এই বৃহত্তম সম্মেলনে, সেখানে বিদেশ থেকে অল্প কয়েকজনকে প্রতীকী হিসেবেও অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। 

বিশেষ পরিস্থিতিতে এবারের হজের প্রস্তুতি থাকলেও আমরা দোয়া করব মহান আল্লাহ তায়ালা যেন সব স্বাভাবিক করে দেন। আগামী বছর থেকে যেন মুসলিম উম্মাহ স্বাভাবিকভাবে হজ আদায় করতে পারে। 

হজ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তম সমাবেশ। হজের আভিধানিক অর্থ সংকল্প করা, কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করা। শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট তারিখে মক্কার কাবাঘর দক্ষিণ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানো, মিনায় অবস্থান প্রভৃতি কতিপয় কার্য যেভাবে হযরত মোহাম্মদ (সা.) নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেইভাবে সম্পাদন করার নাম হজ। এটি হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের পঞ্চম।

হজের কতিপয় মৌলিক বিষয় হলো- ১. হজের নিয়ত, ২. ইহরাম বাঁধা, ৩. আরাফাতের মাঠে অবস্থান, ৪. মুযদালিফায় রাত্রিযাপন, ৫. মিনায় অবস্থান এবং শয়তানের প্রতি কঙ্কর নিক্ষেপ, ৬. কাবাঘর তাওয়াফ, ৭. হাজরে আসওয়াদে (কালো পাথর) চুমু দেয়া, ৮. সাফা-মারওয়ায় দৌঁড়ানো, ৯. কোরবানি করা ও ১০. মাথার চুল কর্তন।

হজের মহাসম্মেলন এটাই শিক্ষা দেয় যে, দীন সমস্ত দুনিয়ার জন্য ও মুসলমানদের মধ্যকার বিভেদ-বিভ্রান্তি ও অনৈক্যের কারণগুলো হজের দর্শনের পরিপন্থি। তাই হজই হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার একমাত্র সঠিক ও সামগ্রিক শিক্ষা।

হজ পালনের পুরো অনুষ্ঠানটি একইসাথে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বীকৃতি। যেমন সৃষ্টির স্বীকৃতি, ইতিহাসের স্বীকৃতি ও আল্লাহর দাসত্ব মেনে নেয়া। হজ আনুষ্ঠানিকতার এই মঞ্চায়নে মহান আল্লাহই রয়েছেন ব্যবস্থাপকের ভূমিকায়। আর সমবেত হাজীদের কাজের মাধ্যমে এই মূল ভাবটি ফুটে ওঠে। হযরত আদম (আ.), হযরত ইব্রাহিম (আ.), হযরত হাজেরা (আ.) এবং পাপাত্মা শয়তান হলো এই মঞ্চায়নের মূল চরিত্রসমূহ। দৃশ্যপট হলো মসজিদুল হারাম, কাবার চতুর্দিক, আরাফাতের ময়দান, মাশআরুল হারাম ও মিনা প্রান্তর। মূল প্রতীকগুলো হলো কাবা, সাফা-মারওয়া, দিন-রাত্রি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, মূর্তি ও কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা। সাজ- পোশাক যেন ইহরাম, হালক ও তাকসির। 

এবারে হজযাত্রীদের সাতদিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতার প্রথম ধাপ শুরু হয়। মক্কার হাজিরা ৮ জিলহজ বাদ ফজর রওয়ানা হবেন মিনায়। মিনাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ১২ জিলহজ্জ পর্যন্ত মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দান ও মক্কায় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়।  

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। হজযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন। এবার হাজীরা মিনার তাঁবুতে থাকবেন না। মিনার নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে তারা অবস্থান করবেন। এছাড়া তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ স্পর্শ ও হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া যাবে না। নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে তাওয়াফ ও  দৌড়ানো সম্পন্ন করতে হবে। তাওয়াফের সময় দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। 

কোরবানি সম্পন্ন করতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। হজযাত্রী ও হজ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা হবে। কারো মাঝে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে। 

এবারের হজের খুতবা ১০ ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচার করার। ভাষাগুলো হলো- ইংরেজি, মালে, উর্দু, ফার্সি, ফরাসি, চীনা, তুর্কি, রুশ, হাউসা ও বাংলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh