সেনা অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ মালির প্রেসিডেন্টের

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৬ এএম

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতা

প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতা

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সামরিক বাহিনীর একটি অংশের হাতে আটক হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতা পদত্যাগ করেছেন।

আজ বুধবার ভোরে (১৯ আগস্ট) টেলিভিশন ভাষণে তিনি সরকার ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য কোনোরকম রক্তপাত হোক, সেটা আমি চাই না।

তিনি আরো বলেন, যদি আজ আমাদের সেনাবাহিনীর একটি নির্দিষ্ট অংশ নিজেদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাপ্তি টানতে চায়, আমার সামনে কি সত্যিই আর কোনো বিকল্প আছে? 

এর আগে তাকে ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বোউবোউ সিসেকে আটক করে রাজধানী বামাকোর একটি সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যায় বিদ্রোহী সৈনিকরা। তার আগে বিদ্রোহী সৈন্যরা রাজধানী বামাকো থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের একটি সামরিক ঘাটি, কাটি ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ ও ফ্রান্স।

মালির সৈন্যদের মধ্যে বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ ও জঙ্গিদের সাথে অব্যাহত লড়াই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। সেইসাথে সাবেক প্রেসিডেন্টের ওপরেও অনেকে সন্তুষ্ট নন। ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হন কেইতা। কিন্তু দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় তার ওপর অনেকের ক্ষোভ তৈরি হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে বেশ কয়েকবার বড় ধরণের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির রক্ষণশীল মুসলমান ইমাম মাহমুদ ডিকো নেতৃত্বাধীন নতুন একটি জোট দেশে সংস্কারের দাবি তুলেছে। তাকে কেইতা যৌথ সরকার গঠন করাসহ নানা প্রস্তাব দিলেও তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মালির কাটি সামরিক ঘাটির ডেপুটি কমান্ডার কর্নেল মারিক ডিয়াউ ও জেনারেল সাদিও কামারা এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বামাকো থেকে বিবিসি আফ্রিকান সার্ভিসের সাংবাদিক আবদাউল বা।

বামাকো থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের এই সামরিক ঘাটির দখল নেয়ার পর বিদ্রোহী সৈনিকরা রাজধানীতে চলে আসে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী কেইতার পদত্যাগের দাবিতে জমায়েত হওয়া লোকজন তাদের স্বাগত জানায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে থাকা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী- দুইজনকেই গ্রেফতার করে। প্রেসিডেন্টের ছেলে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকেও আটক করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

তবে এই বিদ্রোহে দেশটির কতো সৈনিক অংশ নিয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ২০১২ সালেও কাটি সামরিক ঘাটিতে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল যখন জঙ্গিদের ঠেকাতে সিনিয়র কমান্ডারদের ব্যর্থতা আর উত্তর মালিতে তুয়ারেগ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল সৈনিকরা।

এদিকে বিদ্রোহের ঘটনায় আফ্রিকার ১৫টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইকোনমিক কম্যুনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস ঘোষণা করেছে, তারা মালির সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দেবে, সব ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করবে এবং জোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে আপাতত মালি বাইরে থাকবে।

মালির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার আলোচনায় বসবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পাশাপাশি মালির ঔপনিবেশিক সাবেক শাসক ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকে আটকের নিন্দা জানিয়েছে। সৈনিকদের ব্যারাকে ফিরে যেতে আহবান জানিয়েছে ফ্রান্স। -বিবিসি

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh