আর্টের কাছে যেতে হবে খোলা মন নিয়ে যোগসাজশ না খুঁজে

অ্যান্তনি তাপিস

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:৩১ পিএম

আপনি আইন অনুষদের ছাত্র ছিলেন এবং তা ছেড়ে দিয়ে পেইন্টিংয়ে মনোনিবেশ করেন। সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করে নিয়েছিলেন?

আমার সবসময়ই আর্টের প্রতি ছিলো বিশেষ ঝোঁক। ছোটবেলা থেকেই আমি আঁকতে ভালোবাসতাম। আমার দক্ষতা কম ছিলো; কিন্তু প্রবল ইচ্ছার কারণে সময়ের সঙ্গে তা উন্নত হয়। আমার বাবা, যিনি পেশায় উকিল, আশা করেছিলেন আমিও তার মতো একই পেশা বেছে নেব। মূলত তার ইচ্ছার কারণে আমি পাঁচ বছর আইন নিয়ে পড়াশোনা করি। তারপর ভাগ্যের জোরে আমি স্কলারশিপ পাই বার্সালোনায় অবস্থিত ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউটে। এই সুবিধার্থে আমি প্যারিস যেতে সমর্থ হই। স্কলারশিপটি ছিল চমৎকার। যদিও অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি ছিল না, তবে বাধ্যবাধকতা ছিলো কম। তাদের দেয়া বৃত্তি আমার সচ্ছলভাবে জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট ছিলো। আমার জন্য এটা ছিলো চরম সৌভাগ্য।

আপনি মানুষ হিসেবে কেমন?

আমি জোর গলায় একজন উদ্বেগজনক মানুষ। আমি প্রায় সবকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগি। আমার সবকিছু জানার প্রবণতা আছে। আমি এমনভাবে জীবনযাপন করি যেন জীবন একটা বিপর্যয়। আমার একটা ঝোঁক আছে, ঝোঁক না, বলতে পারেন চাহিদা- যে সমাজের জন্য উপকারি কিছু করা। আর এই চাহিদাটাই আমি। সব অবস্থাতেই আমি ভাবি যে কোনটা ভালো আর তা সার্বিকভাবে। আমার আগ্রহ পড়ালেখা, অনুচিন্তন, দর্শন কিন্তু সবসময়ই আমি যা করি তা অনুগ্রহ থেকে, এমনকি পেইন্টার হিসেবেও আমি এমন পল্লবগ্রাহী ব্যক্তি।

আর্টকে একটি সূত্র বা ফর্মুলাতে নিয়ে আসা কঠিন এবং সবার কাছে নিজের মতো সংজ্ঞা রয়েছে। আপনারটা কোনটা?
আমার জন্য, আর্ট একটা পদ্ধতি, একটা ব্যবস্থা যা দর্শকের দেখার ধারণা পাল্টে দিতে পারে এবং তার গভীরতম বাস্তবতার আরও কাছে নিয়ে যেতে পারে। আর্টিস্ট আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন এবং প্রত্যেক আর্টিস্টের আছে নিজস্ব পদ্ধতি; কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য একই যা হচ্ছে আর্টকে ব্যবহার করে আত্ম-আলোকিত করা, যে আলো তাদের বাস্তবতা ও এর গভীরতা সম্পর্কে বোধ জাগিয়ে তুলবে। আমার জন্যও এটাই আর্ট।

  • (অ্যান্তনি তাপিসের পুরো নাম- ‘অ্যান্তনি তাপিস পুজ, মার্কেস দে তাপিস’ ১৯২৩ সালে স্পেনের বার্সেলোনায় জন্ম নেন। স্পেনে অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টের গোড়াপত্তন হয় এই কাতালান শিল্পীর হাত ধরে। সাররিয়েলিস্ট হিসেবে মূলত কাজ শুরু করলেও ফ্রেঞ্চ পেইন্টিংসের প্রভাবে হয়ে ওঠেন বিশ্বখ্যাত অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টিস্ট। বাবার ইচ্ছায় আইন নিয়ে পড়া শুরু করলেও তা শেষ না করেই ছেড়ে দেন আর পেইন্টিংসে মনোনিবেশ করেন। তাপিস তার পছন্দের ধারার কাছে আসেন ১৯৫৫ সালে জিন ডুবায়েটের করা শিল্পকর্ম দেখে। ১৯৫৮ সালের ভেনিস ব্যাই এনিয়্যালে তার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় পুরো একটি রুম। তার কাজ করার ধারাও অনেক মৌলিক। ‘ডেস্ক অ্যান্ড স্ট্র’ শিরোনামের কাজটিতে তাপিস ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করেছেন প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় এমন একটি টেবিল। এ ছাড়াও নানান বস্তু যেমন- আয়না, মার্বেল, বালতি, বালু কিংবা মোটা কাপড়ের ব্যবহারও দেখা যায় তার কাজে। ১৯৯০ সালে বার্সেলোনায় তাপিস ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে প্রায় ২ হাজার শিল্পকর্ম নিয়ে। তাপিসের আর্ট ও মতবাদ নিয়ে ১৯৯১ সালে একটি বই সম্পাদনা করা হয় ‘কনভারসেশন উইথ অ্যান্তনি তাপিস’ নামে। অ্যান্তনি তাপিস তার শিল্পকর্মের জন্য পুরো পৃথিবীতেই বিখ্যাত। বড় বড় জাদুঘরে তার শিল্পকর্মের এক্সিবিশন হয়ে থাকে। ইউনেস্কো ও কার্নেগি ফাউন্ডেশন প্রদত্ত অ্যাওয়ার্ডে প্রমাণ মেলে তার আন্তর্জাতিক খ্যাতির। এই সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা করেন সেরফিল গার্সিয়া ইবানেজ, ইউনেস্কোয় কর্মরত সাংবাদিক।)


‘বাস্তবতা’ এই শব্দটি দিয়ে আপনি কি বোঝাচ্ছেন? আপনি প্রায়শই এই শব্দ ব্যবহার করেন।
বাস্তবতা বলতে আমি প্রয়োজনীয়তা বোঝাই। জীবনের গভীরতা কখনো দূরে নিষিদ্ধ স্থানে লুকানো থাকে না। এটা আমাদের প্রতিদিনে গাথা আছে। মহৎ মহৎ ব্যক্তিদের কাছে আমি এটাই শিখেছি। দূর প্রাচ্য দেশের চিন্তকের কাছে সত্যজ্ঞান হচ্ছে প্রতিদিনের জীবনযাপন (সামাসারা) ও (নির্ভানা) জীবনের গভীরতা যা অর্জন থেকে আমি দূরে মনে করি। বাস্তবতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন মানে এই না যে- আপনাকে দূরে কোথাও যেতে হবে। আপনার পরিপার্শ্বের সঙ্গে মগ্ন হয়েও তা সম্ভব। বাস্তবতা মূর্ত কিংবা বিমূর্ত নয়। দুটোই এক সঙ্গে বাস্তবতা।

আপনার কাজ পুরো বিশ্বেই পরিচিত; কিন্তু অনেকে এটাকে জটিল মনে করে। আপনার কি ধারণা সাধারণ মানুষ অলঙ্কারপূর্ণ আর্ট দেখে অভ্যস্ত তাই?
এটা সত্য, যে শিক্ষা আমাদের দেয়া হয়, তা আমাদের মধ্যে এক ধরনের অভ্যাস স্থাপন করে। যতদূর আর্ট সম্পর্কে বলা যায়, প্রচলিত মতবাদ হচ্ছে আর্ট প্রকৃতিকে অনুলিপি করে। অন্যভাবে বলা হলে বাস্তবতাই সবচেয়ে অগভীর আকার। আজকের দিনে ফটোগ্রাফি, সিনেমা এবং টেলিভিশনের দায়িত্ব এটা। ফটোরিয়েলিজম বলে যা ছিলো, তা এখন অচল। এটা যে দ্বন্দ্বপূর্ণ তা এমন নয়; কিন্তু যা প্রকাশতিব্য, সেটা আমরা অন্য পদ্ধতিতেও করতে পারি।

আপনি তো নিজেই ফিগারেটিভ আর্টিস্ট হিসেবে শুরু করেছিলেন...
হ্যাঁ, অবশ্যই! আর সবার মতোই। আমাদের সময়ের আর্টিস্ট হিসেবে আমরা আকৃষ্ট হই, প্রকৃতির অনুলিপি নিয়েই, যা নিয়ে আমরা কথা বলছিলাম। আমি কোনো একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণ করিনি, বরং নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি। এটা করেছি বন্ধুদের পোট্রেট আঁকিয়ে আঁকিয়ে, নিজের বক্তব্যকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখাতে।

একটা শিল্পকর্ম কি কোনো বার্তা দেয়?
মাধ্যমটাই কি বার্তা? এই বিষয়ে অফুরন্ত আলোচনা রয়েছে। যে মাধ্যমে দেখানো হয়, সেটাও বার্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উদাহরণস্বরূপ, প্রথাগত অলঙ্কারিক পেইন্টারের মতো, আমিও একটা স্টিল লাইফ আপেল আঁকতে পারব; কিন্তু আমি এটা করবো যখন আমি কিছু প্রকাশ করতে চাই। আমি ওই আপেলগুলোকেই নিজের মতো আঁকবো। হয়তো আমি ছবিটিকে গতি দেবো, ঘূর্ণন দিতে পারি, বেঁচে থাকার ছাপ দিতে পারি। একটা পেইন্টিং প্রকাশ করে পেইন্টারের চিন্তাধারা, তার নিজের বাস্তবতা। যেই বাস্তবতার কথা আমরা বলছি, তা সমসাময়িক অনেক আর্টিস্ট থেকে দূরে নয়। আমাদের প্রযুক্তিগত সুবিধা আছে এখন, তার মধ্যে কিছু প্রযুক্তি খুবই সরল। মানুষের ধারণা, কম্পিউটার, নতুন প্রযুক্তির ক্ষমতা আছে বাস্তবতাকে আরো বেশি করে ফুটিয়ে তোলার। আমার ক্ষেত্রে এমন নয়। আমার উপকরণ যথেষ্ট বিনয়ী। ক্ষয়ে যাওয়া ব্রাশ হলেও আমার চলবে। এই সহজ যন্ত্রটাই সবচেয়ে বেশি অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে।

আপনি তো অনেক সাধারণ উপকরণ ব্যবহার করেন আপনার কাজে। যেমন কার্ডবোর্ড কিংবা মোটা কাপড়।
এটাও একটা বার্তা। উপকরণগুলোও বার্তা পৌঁছাতে পারে। সোনালি একটা পাতা যে প্রতিক্রিয়া আপনার মনে জাগাবে একটি কার্ডবোর্ড তা করবে না। দুটি ভিন্ন। এই মামুলি উপকরণ, যা আমরা সাধারণ নজরে এড়িয়ে যাই, আমি আসলে এমন কিছু খুঁজছিলাম। এসব জিনিস দর্শককে ভাবতে বাধ্য করে।
হয়তো তারা হুট করে এসবকে আবর্জনা ভাববে; কিন্তু সে যখন সামান্য চিন্তাও করবে তখন এই নিত্য নৈমিত্তিক বস্তুর বাস্তবতা আর সৌন্দর্য সে উপলব্ধি করতে পারবে। জাপানিজরা বলে- বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটি বালুর কণার মধ্যে আবদ্ধ। এই উপকরণগুলো, যা নেহাৎই আবর্জনা, তবুও একটি মৌলিক বার্তা পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

আর্টিস্ট এবং তার আর্ট কি রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা নৈতিক হওয়া জরুরি? নাকি সৌন্দর্যের সমর্থনই আর্টের জন্য যথেষ্ট?
আমার সবসময়ই মনে হয় মতাদর্শ ও রাজনৈতিক আদর্শ অত্যন্ত জরুরি; কিন্তু এটা অবশ্যই আর্টিস্টের স্বাভাবিক বুদ্ধিতাড়িত হতে হবে, আমরা ফ্যাসিস্ট বা কমিউনিস্ট যা দেখেছি যে রাজনৈতিক নিরুৎসাহ থেকে জন্ম নেয়া দর্শন, এমনটা হলে চলবে না। আমার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিই আমার কাজ করার পদ্ধতি। বর্ণনা স্বভাবতই পটভূমিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। যে মানুষকে খুশি করতে কিংবা বোকার স্বর্গে রাজা হবার জন্য আঁকে, সে খুবই অখুশি হবার কথা; কিন্তু আমি আবারো বলছি বার্তা মূলত আর্ট থেকেই প্রসূত হয়। আর্ট নিজেই তার সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা ভাবাদর্শ প্রকাশ করে।

একটা বার্তা তখনই অর্থবহ যখন তা বোধগম্য এবং সমকালীন আর্টের ভাষা সবার জন্য পরিষ্কার নয়। দীক্ষা কী দরকারি এ বিষয়ে?
আমার মনে হয় দরকার। এইটা শিক্ষার অংশ হওয়ার কথা। দুর্ভাগ্যক্রমে, যেহেতু অনুভব শক্তি বেড়ে ওঠে ছোটবেলায়, দীক্ষার প্রশিক্ষণও তখনই দরকার। আমার মনে হয় না পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থা- বিশেষত স্পেন- এর জন্য প্রস্তুত নয়। স্কুলেই আর্ট শেখাতে হবে যাতে বাচ্চাদের মধ্যে রুচিজ্ঞান সৃষ্টি হয় এবং তারা তুচ্ছতার শিকার না হয়। অধিকাংশ মানুষই আর্টকে পূর্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করে। দর্শক তাই খুঁজে পায় যা সে খোঁজে। এটা নিজেকে অনুরূপ করে চলা কিংবা ভুল তথ্যের ফল। আর্টের কাছে যেতে হবে খোলা মন নিয়ে যোগসাজশ না খুঁজে। নিজের মনের কথা শুনতে হবে।

কোন পেইন্টার কিংবা পেইন্টারদের আপনি প্রশংসা করেন?
তাদের সংখ্যা এতই বেশি যে আপনার জন্য ব্যাপারটা বোরিং হয়ে যাবে। আমি স্বল্প পরিসরে আর্ট সংগ্রহ করি। আমি আমার পছন্দের আর্টিস্টের করা কাজের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি এবং আমি প্রচণ্ড রকম মানসিকভাবে ঔদার্য। মিসরীয় শিল্প, চাইনিজ পেইন্টিং এবং উয়ান সময়ের (যা আমাদের সমসাময়িকদের জন্য অনুপ্রেরণা) পেইন্টিংস, জাপানিজ ও চাইনিজ ক্যালিগ্রাফি এসব আমার পছন্দ তালিকায় উল্লেখযোগ্য। আফ্রিকান শিল্প, কার্টিজিয়ান পূর্ব এবং কলাম্বাস পূর্ব শিল্পও আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

আর স্প্যানিশ আর্টিস্টদের মধ্যে?
স্প্যানিশ শিল্প আর পেইন্টিংসের পরিসর খুব বড়। ব্যক্তিগতভাবে আমি রোমান যুগের স্থাপত্য শিল্প (রৌমানেসক) ভালোবাসি, বিশেষত কাতালান রোমানেসক। গথিক শিল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য আমার পছন্দ, রিবেরার রহস্যময় কাজ এবং অবশ্যই পিকাসো, মিরো।

আপনি একজন কাতালান পেইন্টার বাদ দিয়েছেন, দালি।
দালি ১৯৩০-এর দিকে খুবই মজার কাজ করেছেন- তারপর তিনি যে পদ্ধতি বেছে নেন, সে পদ্ধতিকেই মূলত আমি এতক্ষণ আক্রমণ করছিলাম, ফটোপেইন্টিং। মতাদর্শের দিক দিয়ে, গৃহযুদ্ধের সময় কৃতকর্মের কারণে তার প্রতি আমার আগ্রহ কমে যায়। নাগরিকদের প্রতি তার আচরণ এবং ব্যক্তি হিসেবেও দালি আমাকে আশাহত করেন।

পেইন্টিংয়ের বাইরে আপনার কোনো শখ রয়েছে?
আমি বই সংগ্রহ করি। পুরাতন, নতুন সব বই। জীবনের রহস্য নিয়ে কথা বলে এমন যে কোনো বই। আমি গানও শুনি। রোমান্টিক গানের ভক্ত আমি। ওয়েগনার আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হয়। তার পরবর্তী কম্পোজারও আমার ভালো লাগে যেমন- ব্রুকনার এবং মহলার। নতুনদের মধ্যে আমার ভালো লাগে সেসলির গান, ওর কাজ এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। এই মুহূর্তে ওর গানই আমার প্রিয়। এ ছাড়া জার্মান ও ফ্রেঞ্চ কম্পোজারদের কিছু গান আমার ভালো লাগে।

আপনার কি ফ্লেমেঙ্কো পছন্দ?

আমি এটা ভালো করে জানি না। এটা বলা উচিত হবে না কারণ ফ্লেমেঙ্কো বোঝার না, অনুভব করার। আমার সঙ্গে এমন হয়নি; কিন্তু যখনই আমার সুযোগ হয়েছে দেখার বা শোনার আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি।

সাহিত্য শব্দ ব্যবহার করে, সংগীত ব্যবহার করে ধ্বনি। স্থাপত্য, ভাস্কর্য এবং পেইন্টিং ব্যবহার করে বস্তু। তার মানে কি এই শিল্পের মাধ্যমগুলোতে অনতিক্রম্য সীমান্ত রয়েছে?
আমার অভিজ্ঞতা থেকে তো নয়। এগুলো একাডেমিক সংজ্ঞা যেগুলো আমাদের আলাদা করে ভাবতে বাধ্য করে। মাঝে মাঝেই আমার নিজেকে কবি মনে হয়, এমনকি অনেকে আমার কাজগুলোকে কবিতার রূপক বলেও আখ্যা দেয়। আবার অনেক সময় সংগীতের সঙ্গেও সখ্যতা হয় আমার। আমার ব্যবহারের জিনিসগুলো যখন ভাঙে তখন তারা সংগীত সৃষ্টি করে। আমার পেইন্টিংসগুলো ভাস্কর্যের কাছাকাছি। আমি ইচ্ছা করেই ত্রিমাত্রিক কাজ করে থাকি। তাই যে অদৃশ্য সীমান্তের কথা বলছেন তা ক্রমশই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

আপনি ইউনেস্কোর জন্য পদক ডিজাইন করেছিলেন, যা ব্যবহৃত হয়েছিল পাবলো পিকাসোর শতবর্ষে স্মারক হিসেবে। কিছুদিন আগে জোয়ান মিরোর শতবর্ষ উপলক্ষে যে স্মারক ব্যবহার হয়েছে, সেটাও আপনি ডিজাইন করেছেন।

যখন ইউনেস্কো আমাকে এই দায়িত্ব দেয়, তখন আমি খুব পরিতৃপ্তি অনুভব করেছিলাম। এটা একটা রাস্তা ছিলো, যা পরবর্তী প্রজন্মকে একসঙ্গে করতে পারে, তাও আবার পিকাসো এবং মিরো, যাঁদের আমি ভালোভাবে চিনতাম তাদের মাধ্যমে। আমি মিরো ফাউন্ডেশনে গভর্নিং বডির মেম্বার ছিলাম। মিরো খুব মানবিক এবং একই সঙ্গে কল্পনাপ্রবণ ছিলো। আমরা প্রায়শই চেষ্টা করি বাস্তবতা থেকে পালাতে; কিন্তু স্বপ্ন যা আমরা লালন করি নিজের অজান্তে সেগুলো বাস্তবতার আরো কাছে। মিরোর কাজ আমার কাছে সহিংস আলোড়ন মনে হয়। আর পিকাসোর কথা বলতে, যে মহৎ স্থান সে দখল করেছে, মানবিকতার প্রতি আনুগত্যতা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন মতবাদ সমর্থন, আমার কাছে সে একজন বড় শিক্ষক।
ভাষান্তর : আ ন ম তন্ময়

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh