রাজনৈতিক প্রভাবে চলছে সরকারি ক্রয়: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০৮ পিএম

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কাজে ইজিপি বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হলেও, কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো রাজনৈতিক প্রভাব আর সিন্ডিকেটই মূল ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ইজিপির কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি।

ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমীন ও শহিদুল ইসলাম গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন।

টিআইবি জানায়, ইজিপির অন্যতম প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ছিলো সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হ্রাস করা ও কাজের মান বাড়ানো। তবে দুর্নীতি ও কাজের মানের ওপর ইজিপির কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায় না। ইজিপি প্রবর্তনের ফলে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ও দরদাতাদের সিন্ডিকেট এখনো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনো স্থানীয় সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক নেতার প্রভাবে নেয়া হচ্ছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও দরদাতাদের সিন্ডিকেটও জড়িত। পাশাপাশি কাজ নিয়ে বিক্রি করে দেয়া, অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়া, এবং কাজ ভাগাভাগির কারণে কাজের মানের ওপরও ইজিপির কোনো ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় যে প্রত্যাশা নিয়ে দশ বছর আগে ইজিপি করা হয়েছিল তা এখনো পূরণ হয়নি। সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তণ হয়নি।

তিনি আরো জানান, ইজিপি প্রবর্তনের ফলে ম্যানুয়াল থেকে কারিগরি পর্যায়ে সরকারি ক্রয়ের উত্তরণ ঘটলেও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের একাংশ দুর্নীতির নতুন পথ খুঁজে নিয়েছে। প্রক্রিয়াগতভাবে যেসব দুর্নীতি আগে প্রচলিত ছিল, কারিগরি পর্যায়ে তা এখন সম্ভব না হলেও এই প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে দুর্নীতির নতুন উপায় খুঁজে নিয়েছে। এক অর্থে দুর্নীতি এখন আরো বেশি সংগঠিত ও পরিকল্পনামাফিক সমঝোতার ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। তবে একে ইজিপির ব্যর্থতা বলা সঠিক হবে না।

গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইজিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনো কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। এসব সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ ঘটালে ইজিপির সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে। ২০১১ সালে প্রবর্তনের পর থেকে ধীরে ধীরে এর সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ ঘটছে, প্রায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, বাজেট ও জনবলের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, যা এখনো চলমান। তবে দেখা যাচ্ছে প্রবর্তনের প্রায় নয় বছর পরও ইজিপির ব্যবহার এখনো সীমিত- সব প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ক্রয় ইজিপির অধীনে হচ্ছে না এবং এর ব্যবহার এখনো ক্রয়াদেশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

দেশে প্রথম ইজিপির আওতাভুক্ত চারটি প্রতিষ্ঠান এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কার্যক্রমকে এই গবেষণার আওতায় নেয়া হয়। ইজিপি অনুসরণের বিষয়ে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) (৫০%)। এর পরে রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ ৪৪ শতাংশ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৩ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৪২ শতাংশ। প্রাপ্ত সার্বিক স্কোর অনুসারে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের অবস্থানই ভালো নয় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম উদ্বেগজনক বলেও জানায় টিআইবি। তবে সয়ংক্রিয় পদ্ধতির ফলে দপত্র জমা দেয়া, যাচাই বাছাই, শিডিউল জমা দেয়া, সবার অংশগ্রহণসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তণ এসেছে বলে উঠেছে এসেছে গবেষণায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh