তারকাদের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম বয়কট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:০৮ পিএম

জনপ্রিয় মডেল ও সুপরিচিত তারকা কিম কার্দাশিয়ান ওয়েস্ট এবং আরো বেশ কিছু বিখ্যাত সেলেব্রিটি ঘোষণা করেছেন যে সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণা, প্রচারণা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তারা তাদের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেবেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ভুয়া খবর শেয়ার করা হচ্ছে তার একটা গুরুতর প্রভাব পড়ছে বলে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন কিম কার্দাশিয়ান। নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা #StopHateforProfit ( ঘৃণার বিনিময়ে মুনাফা অর্জন বন্ধ করো) এই হ্যাশট্যাগ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে তারই অংশ হিসাবে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারকারা তাদের অ্যাকাউন্ট আজ চব্বিশ ঘণ্টার জন্য পুরো বন্ধ রাখছেন।

কিম কার্দাশিয়ান ওয়েস্ট বলেন, কিছু কিছু গোষ্ঠী আমেরিকাকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, যেভাবে প্রচারণা ও ভুয়া তথ্য শেয়ার করছে এবং সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো যেভাবে তা চলতে দিচ্ছে- তাতে আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না। সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্যপ্রবাহ আমেরিকার নির্বাচন ও গণতন্ত্রের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

সামাজিক মাধ্যম বয়কট করার এই আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন অন্যান্য যেসব বড় বড় তারকা তাদের মধ্যে আছেন লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও, সাচা ব্যারন কোহেন, জেনিফার লরেন্স এবং গায়িকা কেটি পেরি।

ইনস্টাগ্রামে কেটি পেরি লিখেছেন, যারা ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ছড়ানোর লক্ষ্যে পোস্ট দিচ্ছে, সেসব গোষ্ঠী বা পোস্টের ব্যাপারে এসব প্ল্যাটফর্ম-এর উদাসীনতা সম্পর্কে আমি মুখ বুঁজে থাকতে পারি না।

সামাজিক মাধ্যমে অভিনেতা অ্যাশটন কুচারের অনুসারী কয়েক লক্ষ। তিনিও এই বয়কট আন্দোলনে যোগ দিয়ে বলেন, ঘৃণা, বিদ্বেষ (এবং) সহিংসতা ছড়ানোর হাতিয়ার হিসাবে এই প্ল্যাটফর্মগুলো তৈরি করা হয়নি।

#StopHateforProfit campaign, এর উদ্যোক্তারা এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন জুন মাসে। তাদের অভিযোগ ছিলো ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ঘৃণা উদ্রেককারী মন্তব্য এবং ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য বন্ধ করার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই গোষ্ঠীটির মূল টার্গেট ফেসবুক, কারণ তারা ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এরও মালিক। গত বছর তারা বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছিল প্রায় সাত হাজার কোটি ডলার।

এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রধান নাগরিক আন্দেলন গোষ্ঠী। যাদের মধ্যে রয়েছে বর্ণ সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে আমেরিকায় প্রথম সারির কিছু আন্দোলনকারী গোষ্ঠী।


আমেরিকার ইতিহাসে একটা অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন খুব শিগগিরি হতে যাচ্ছে, এধরনের একটি আন্দোলন গোষ্ঠী এনএএসিপি মন্তব্য করেছে। ফেসবুক যেহেতু এধরনের মন্তব্যের ব্যাপারে রাশ টানছে না, এবং তাদের পরিবর্তনও এতই অস্পষ্ট যা আমাদের গণতন্ত্র সুরক্ষিত রাখতে যথেষ্ট নয় এবং এক কথায় বিপদজনক।

জুন মাসে ফেসবুক জানায় তারা ক্ষতিকর হতে পারে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন পোস্টের সংবাদ গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সে সম্পর্কে সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দেবে।

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ একথাও বলেন যে, কোন বিশেষ জাতিগোষ্ঠী, বর্ণ সম্প্রদায়, জাতীয় পরিচয়, ধর্ম বিশ্বাস, লিঙ্গ পরিচিতি বা অভিবাসন অবস্থানের যে কোন মানুষকে যদি অন্যের জন্য হুমকি হিসাবে দাবি করে কোন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, তার কোম্পানি তা নিষিদ্ধ করে দেবে। আমেরিকায় ২০২০-র নির্বাচন যে খুবই উত্তপ্ত হতে যাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে, তিনি এক বিবৃতিতে লিখেছেন। এ সময়ে সবাইয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সবাইকে অবগত রাখতে ফেসবুক বাড়তি সতর্কতা নেবে।

কিন্তু #StopHateforProfit আন্দোলন গোষ্ঠী ফেসবুককে আরো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে, এবং ৯০টির বেশি সংস্থা ফেসবুকে তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। এই বয়কটের কারণে ফেসবুকের শেয়ার নাটকীয়ভাবে পড়ে গেছে। আমেরিকার গণমাধ্যম জানাচ্ছে জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ এর ফলে ৭২০ কোটি ডলার কমে গেছে।

বিশ্ব ব্যাপী নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এবং নীতি নির্ধারকরা সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও উস্কানিমূলক পোস্টের বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। শুধু ফেসবুকে নয়, সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে। এই সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবেলায় কিধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে অনেক দেশই তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh