বিস্ফোরণের ঘটনায় মসজিদ কমিটিকে দায়ী করল তিতাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:৩৪ পিএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:০২ পিএম

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় মসজিদ কমিটির ওপরে দায় চাপিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিতাস।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের হাতে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

এ সময় জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আব্দুল ফাত্তাহ, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. মামুন, তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল ওয়াহাব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিতাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বিস্ফোরণে তিতাসের কোনো দায় নেই। মসজিদের কলাম নির্মাণের সময়ে তিতাসের গ্যাস লাইন নষ্ট হয়েছিল। কেবল তাই নয় লিকেজের বিষয়টি তিতাসকে জানায়নি মসজিদ কমিটি। সেখান থেকে গ্যাস জমা হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই মসজিদটিতে বিকল্প লাইন হিসেবে অবৈধ বিদুৎ সংযোগও ছিল। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প অবৈধ লাইনটি চালুর সময়ে জমে থাকা গ্যাস ঢুকে শর্ট সার্কিট থেকে দুর্ঘটনা ঘটে।

তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল ওহাব বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের নিয়ম-কানুন না মেনে, অবহিত না করে গ্রাহক তাদের নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে রাইজারগুলো নরমালভাবে প্লাগ এবং সকেট দিয়ে স্থানান্তর করেছে। এটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। আমাদের এই লাইনগুলো ১৯৯৬ সালে দুর্ঘটনাস্থলের নিচে বসানো ছিল, তারা আমাদের নিয়ম না মেনে লাইনের নিচ দিয়ে বেইজমেন্ট করেছে। এছাড়া ২০০০ সালে নিয়ম না মেনেই মসজিদ নির্মাণ করে। মসজিদটি তৈরি করার সময়ই তারা লাইনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘লিকেজ না হওয়া পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায় না। যেহেতু আমাদের গ্যাসলাইন অবৈধভাবে স্থানান্তরিত করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। পরে মসজিদ নির্মাণের সময় পুরোনো লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেখান থেকে লিকেজ তৈরি হলে গ্যাস লিক হতে থাকে।’

কমিটির প্রধান বলেন, ‘মসজিদের ফ্লোরে ৬-৮ সিসি ঢালাই না থাকায় সেই গ্যাস মসজিদের এসি চেম্বারে গিয়ে জমে। সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প লাইন চালু করলে তা স্পার্ক করে এ ঘটনা ঘটে বলে আমরা মনে করছি।’

তিনি বলেন, ‘দেওয়ান ও শওকত আলী নামের দুই ব্যক্তি অবৈধভাবে তিতাসের নিয়ম না মেনে গ্যাসলাইন স্থানান্তর করেন। এছাড়া মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎলাইন ছিল। গ্যাস লিক হচ্ছে সেটা মসজিদ কমিটি বা স্থানীয়রা কাউকে কিছু জানাননি। একই সঙ্গে মসজিদ নির্মাণে রাষ্ট্রীয় অনুমোদন নেয়া দরকার- সেটার কোনো দলিল বা কাগজ তারা (মসজিদ কমিটি) দেখাতে পারেনি।’

আবদুল ওহাব বলেন, ‘মসজিদ কমিটির সভাপতি বলেছেন, গ্যাসলাইন মেরামতের জন্য তাদের কাছে কে বা কারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। তিনি তাদের নাম বা এর কোনো প্রমাণও দিতে পারেননি। তিনি কেন বলতে পারছেন না- ওনার কাছে কে টাকা চেয়েছেন? গ্যাস লিক করেছে কমিটি আমাদের জানায়নি।’

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী মো. আল মামুন বলেন, ‘যেখান থেকে অভিযোগ আসে বা পাচ্ছি সেখানেই আমরা সমাধান করছি। এটা আমাদের নিয়মিত মনিটরিংয়ের মধ্যে পড়ে। তিতাসের কেউ ঘুষ নিয়ে পার পেয়ে যাবেন- তা হতে পারে না। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গত ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। ওই  ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh