মিয়ানমারের সীমান্তে সেনা মোতায়েন: নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের চিঠি

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪০ এএম

ছবি: ইউএনবি

ছবি: ইউএনবি

রাখাইনকে আবারো অশান্ত করে তুলছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তাই পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক করা থেকে মিয়ানমারকে বিরত রাখতে ও অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ আরো বলেছে, মিয়ানমারকে স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে- যেকোনো সামরিক বা নিরাপত্তা অভিযান চলাকালে তাদের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও তাদের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি চিঠি লিখেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।

বিষয়গুলো নিরাপত্তা পরিষদ যেন জরুরিভিত্তিতে সদস্যের নজরে আনে, সে বিষয়েও নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন।

নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কয়েকটি ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঘটনাগুলো হলো- গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে মংদাওর উত্তরের কয়েকটি স্থানে প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। গত ১০ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার নেভির জাহাজ ইনদিন গ্রামের উপকূলে যায় ও সৈন্যরা সেখানে নামে। পরে তাদেরকে বেসামরিক নাগরিকদের মাছ ধরার ২০টি নৌকায় করে নাফ নদী বরাবর নিগার খু ইয়া গ্রামে নেয়া হয়। যেটি মংদাও শহরের ২০ কিলোমিটার উত্তরে ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থিত। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ বা ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে মংদাওর একটি গ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ রোহিঙ্গা পুরুষ ও তিন রোহিঙ্গা নারীকে আটক করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশের কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্র ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ওই পাশ থেকে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে ও মংদাওর নিকটবর্তী গ্রামে অভিযান চালানো হয়েছে।

এসব ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, ২০১৭ সালে যেভাবে মিয়ানমার তার নাগরিকদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠায় হয়, এই হামলাও একই রকম। যেসব স্থানে এই অভিযানগুলো চালানো হলো, তার ভিত্তিতে এটি অনুমেয় যে, অভিযানের সাথে আরাকান আর্মির সংঘর্ষের সম্পৃক্ততা নেই।

মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যে এ ধরনের সহিংসতার কারণে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং তারা গণহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিয়ানমারের নাগরিক ও বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য একাধিকবার বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে। এসব অভিযানের সময় মিয়ানমার যদি সেখানকার বেসামরিক নাগরিক ও তাদের সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে আবারও মিয়ানমারের নাগরিক ও সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনা ঘটবে। তাই বাংলাদেশ জোর দিয়ে বলতে চায়, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা যথাযথভাবে নিশ্চিত করেই মিয়ানমারকে যেকোনো নিরাপত্তা অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা মিয়ানমারেরই দায়িত্ব।’

এর আগে দুদেশের সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের সেনা মোতায়েন নিয়ে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত শুক্রবার থেকে মিয়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকায় মাছ ধরার ট্রলারে করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করছে বাংলাদেশ।

রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে এ জাতীয় সন্দেহজনক গতিবিধি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। যাতে দুই দেশের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না ঘটে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক সীমান্তে সামরিক বাহিনীর এ জাতীয় চলাফেরা সীমান্তের দুপাশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সীমান্তে সতর্ক রয়েছে ও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সুযোগ দেখছে না।

সীমান্ত এলকায় এভাবে সেনা মোতায়েন করা হলে প্রতিবেশী দেশসমূহ তা জানানোর রেওয়াজ থাকলেও মিয়ানমার বাংলাদেশকে অবগত করেনি। সামনে মিয়ানমারের জাতীয় নির্বাচন। যেকোনো নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণভাবে সবসময় পরিবর্তন হয় ও এটি তারও একটি অংশ হতে পারে।

তবে এসময়ে রাখাইন অশান্ত হলে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলো এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরেও সমস্যা আরো প্রকট হবে।

মিয়ানমারের সেনবাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়ে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ উদারতা দেখিয়ে তাদের আশ্রয় দিলেও প্রায় তিন বছর পরেও নিজেদের নাগিরকদের ফিরিয়ে নিতে টালবাহানা করছে মিয়ানমার। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh