বিএসএফের বিরুদ্ধে গরু পাচারের অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:৪৪ পিএম

ছবি: ডয়চে ভেলে

ছবি: ডয়চে ভেলে

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সাথে জড়িত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনী (বিএসএফ)। সম্প্রতি এমনই তথ্য মিলেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের তদন্তে।

গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পাচারকারী অভিযোগে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে  বিএসএফ। কিন্তু সিবিআইয়ের সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে, অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ ও শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সাহায্য করে।

কিছুদিন আগেই বিএসএফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সাথে জড়িত বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি। বাংলাদেশ সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের উপর দোষ চাপিয়েছিল। সম্প্রতি সিবিআইয়ের এক তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এলো। বলা হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ ও শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু অফিসার সরাসরি গরু পাচারের সাথে জড়িত। 

গতকাল বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিএসএফের এক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। বস্তুত এর আগেও বিএসএফের অফিসারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে ও তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিবিআই জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতায় কলমে দেখাতে হয়, মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে ও কত সংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। মালদা, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনছে তারা পাচারকারী। নিলাম এমনভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছায়। প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেয়া হয় গরু পিছু দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেয়া হয় ৫০০ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।

দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদা-মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই সূত্র। বস্তুত দিনকয়েক আগে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই অফিসাররা রেড চালিয়েছে। ভিন রাজ্যেও কয়েকটি জায়গায় রেড করা হয়েছে। এফাইআর করা হয়েছে বিএসএফের এক কর্মকর্তা ও বেশ কিছু গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসারের নাম সতীশ কুমার। তিনি বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তার সল্টেলেকের বাড়ি সিল করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ভিন রাজ্যে তাঁর আরও বাড়ি আছে। 

সূত্র জানাচ্ছে, মালদায় পোস্টেড হলেও মালদা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের দীর্ঘ সীমান্তে কাজ করেছেন সতীশ এবং সেই সময়েই গরু পাচারের ঘটনার সাথে তিনি যুক্ত হন। তার ছেলেও একই কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। সতীশের সাথে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় প্রায় ২০ হাজার গরু পাচারের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।

এর আগেও বিএসএফের এক অফিসারকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তার কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায়। বিএসএফ ও শুল্ক বিভাগের এমন আরো কর্মকর্তা সিবিআইয়ের নজরে আছে বলে শোনা যাচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি এনআইএ ও সিবিআইয়ের সূত্রের থেকে জানা গিয়েছে, গরু পাচারের সাথে আরো ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। অভিযোগ, গরুপাচারকারীরা অস্ত্রের পাচারের সাথেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবির সাথে জড়িত বলেও কোনো কোনো মহলে অভিযোগ উঠেছে। 

তবে এ বিষয়ে বিশদে এখনো কিছু জানাতে রাজি হননি কর্মকর্তারা। -ডয়চে ভেলে

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh