নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:৫১ পিএম | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:৪৫ পিএম
জাতীয়করণ করার পর যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি থাকবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
পাশাপাশি সমস্যার সমাধান হওয়ার আগেই কেউ অবসরে গেলে পেনশন-গ্র্যাচুয়িটি পাবেন কিনা বা বেতন ফেরত দিতে হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমান সরকার তিনটি ধাপে নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৬ হাজার ১৯৩টি জাতীয়করণ করে। এসব বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা ছিল না। জাতীয়করণের পর শিক্ষক আত্তীকরণের সময় এসব শিক্ষকের তিন বছরের মধ্যে সিইন-এড (সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন) কোর্স সম্পন্ন করে এইচএসসি সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে এসব শিক্ষকের একটি অংশ কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
আবার যোগ্যতা অর্জন না করেই অনেকে অবসরেও গেছেন। অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা পেনশন-গ্র্যাচুয়িটি পাচ্ছেন না। এই বিষয়টি সামনে আসার পর প্রশ্ন উঠেছে, কর্মরত যারা এখনো যোগ্যতা অর্জন করেননি, তাদের চাকরি থাকবে কি না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন এ বিষয়ে বলেছেন, যেসব শিক্ষকের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা নেই, তাদের তিন বছরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যারা তিন বছরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করেননি, তাদের শিক্ষক হিসেবে থাকার কথা নয়।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই আছেন, যারা যোগ্যতা অর্জন করেননি। শুধু তারা নন, যারা বেতন-ভাতা দিচ্ছেন তারাও বিপদে পড়বেন। অডিটে আপত্তি আসবে যে তিন বছরের মধ্যে যোগ্যতা অর্জনের কথা বলা ছিল, তা না করলে কীভাবে বেতন দেয়া হলো।
এসব শিক্ষকের যোগ্যতা অর্জনে আরো সময় দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, তাদের তো চাকরি থাকার কথা নয়। এ জন্যই তথ্যগুলো চাচ্ছি, সমস্যার সমাধান করতে।
এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যদি শর্ত শিথিল করে আরো যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষকদের সিইন-এড কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সবার নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করা ছিল শুধু মাধ্যমিক পাস। ওই বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় নারীদের মাধ্যমিক (এসএসসি) ও পুরুষদের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি)।
১৯৯১ সালের পর আরো দুই দফায় নিয়োগ যোগ্যতা বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও পুরুষদের জন্য স্নাতক করা হয়।
সর্বশেষ নিয়োগবিধি-২০১৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, যোগ্যতাবিহীন শিক্ষকদের জন্য চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষায় যদি শর্ত শিথিলের সুযোগ দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে যেসব শিক্ষক যোগ্যতা অর্জন করেননি তাদের এইচএসসি পাস করতে হবে অথবা সিইন-এড সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
এদিকে শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কোর্সও উন্নয়ন করা হয়েছে। সিইন-এড সার্টিফিকেট কোর্সের পরিবর্তে এইচএসসি পাস শিক্ষকদের জন্য রয়েছে ডিপি-এড (ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন) সার্টিফিকেট কোর্স। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে সিইন-এড সার্টিফিকেট কোর্স চালু নেই।
বর্তমানে ময়মনসিংহ, পাবনা, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খাগড়াছড়িসহ আরও কয়েকটি জায়গায় এই কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর প্রধান ক্যাম্পাস থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন করার ব্যবস্থা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে যোগ্যতাবিহীন এসব শিক্ষকের শর্ত শিথিল করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাসেম বলেন, মানবিক কারণে শর্ত শিথিল করে কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করার সুযোগ দেয়া উচিত। দীর্ঘদিন তারা বিনা বেতনে চাকরি করেছেন। যদি শর্ত শিথিল করা না হয়, তাহলে সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী তাদের চাকরি থাকবে না। তাই তাদের জন্য শর্ত শিথিল করা প্রয়োজন।