ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৭:০৭ পিএম
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি মুসলিম বিশ্বে সৌদি নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশটির ধর্মীয় ও আঞ্চলিক আধিপত্যের সর্বাধিক সংবেদনশীল স্থানে আঘাত করেছেন। তিনি এমন সময়ে এই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, যখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে মিলে সৌদি আরব আঞ্চলিক আধিপত্য রক্ষার জন্য তুরস্ক ও ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীর ইস্যুতে সউদী নেতৃত্বাধীণ ৫৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলে পাকিস্তান এবং দাবি পূরণ না হলে ওআইসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সমমনাদের নিয়ে আলাদা জোট গড়ার হুমকি দেয়।
পাল্টা জবাবে পাকিস্তানকে দেয়া একশ কোটি ডলারের সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা প্রত্যাহার করে মধ্যপ্রাচ্যের মোড়ল। পাকিস্তান সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তাদের নিজেদের পাশে চাইছিল সৌদি। তবে ওআইসিকে পাশ কাটিয়ে সম্মেলন আহ্বানের হুমকি মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বে সৌদি আরবের অবস্থানকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করায় পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
গত ডিসেম্বরে কুয়ালালামপুরে পাকিস্তান, সৌদি অন্যতম প্রতিদ্বন্ধি তুরস্ক এবং ওআইসিবিরোধী মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেছিল মালয়েশিয়া। তবে সৌদির আপত্তির মুখে শেষমুহূর্তে সম্মেলনে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিস্তু, ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান এবং ইহুদি রাষ্ট্রটির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সমর্থন দেয়ার পর সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্কে আরো অবনতি ঘটে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, যিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত-ইসরাইলের যুগলবন্দি মঞ্চস্থ করেছিলেন, চুক্তি ঘোষণার পরপরই জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘অনিবার্যভাবেই সৌদি আরব এবং ইসরাইল পুরোপুরি সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেবে।’
এর ফলে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধান ছাড়াই সংযুক্ত আরব আমিরাতের পদক্ষেপ অনুসরণ করাটা সৌদি আরবের আঞ্চলিক আধিপত্যের চ্যালেঞ্জকে আরো বাড়িয়ে তোলে। দেশটি আশঙ্কা করছে যে, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সম্পদ ও ঐতিহ্য মক্কা ও মদিনার রক্ষণাবেক্ষণ এবং জিম্মাদারি ভাগ করে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্যান-ইসলামিক সংস্থায় সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য মুসলিম দেশগুলির পক্ষ থেকে দাবি উঠবে। এই পরিস্থিতিতে মক্কা ও মদিনার রক্ষণাবেক্ষণ এবং জিম্মাদারি এবং মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসাবে কর্তৃত্ব ধরে রাখাটাই সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ইসরাইল কাছে ধর্ণা দেয়ার প্রধান কারণ। প্রাথমিকভাবে ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য মহলে তার অতীতের বিতর্কিত রূপটি ধামা চাপা দেয়ার জন্য ইহুদী ও খ্রিস্টান গোষ্ঠীগুলির শরণাপন্ন হন তিনি।
সৌদির মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইমরান খানের ২০১৮ সালের নির্বাচনী জয়ের পর খুব দ্রুতই পাকিস্তানতে আর্থিক সঙ্কটে সহায়তা করেছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাহায্যটি পাকিস্তান প্রসঙ্গে রিয়াদের সাথে সংহতি জানানোর থেকে বরং তুরস্ক ও ইরানের বিরুদ্ধে নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিরোধে পাকিস্তানকে দলে টানার উদ্দেশ্যে ছিল, যারা ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এমবিএস সম্ভবত কোরেশির চ্যালেঞ্জকে ঘরোয়া সৌদির সংবেদনশীলতায় আঘাত হিসাবে দেখবেন। মক্কা ও মদিনার রক্ষণাবেক্ষণের রাশ হাতে রেখে ধর্মীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে সৌদির এই শাসক পরিবারের সমস্ত বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বৈধকরণের জন্য ধর্মীয় সমর্থন প্রয়োজন বলে মনে করেন এমবিএস। সূত্র: দ্য অ্যালগেমেইনার।