স্তন্যদানকারী মায়ের খাদ্যাভাস

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৩৭ এএম

প্রসবকালীন মায়ের শরীরের ওপর বাড়তি চাপ থাকে। সেটিকে পূরণ করার জন্য প্রসব-পরবর্তী সময়ে তাই মাকে বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খেতে দেয়া উচিত। 

অনেকের ধারণা, এই সময়ে মাছ-মাংস খেলে শিশুর হাম হতে পারে। প্রসূতি মায়ের ক্ষতি হবে বলে ডিম ও দুধ খেতে দেওয়া হয় না। বোয়াল, ইলিশ, গজার মাছ, গরুর মাংস ইত্যাদি খেতে দিলে নাকি প্রসূতির সূতিকা রোগ হয়। এই ভেবে তাকে এসব খাবার খেতে দেয়া হয় না। 

এমনকি এরকম ধারণাও আছে যে ভালো শাক-সবজি খেলে নাকি মা ও শিশুর পেট খারাপ হয়। আর এমন সব ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে মাকে কোনো রকম মুখরোচক খাবার খেতে দেয়া হয় না। অথচ এ ধারণা একদমই ঠিক নয়। বরং এসব খাওয়ার সাথে বুকের দুধ বেশি হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এসব ভুল ধারণার কারণে অনেক মা-ই শেষে ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে অপুষ্টিতে ভুগেন, অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সন্তান জন্ম দেয়ার পর মায়ের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পাঁচ-ছয় সপ্তাহ সময় লাগে। মায়ের শক্তি পূরণ করতে, রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে আর পানির চাহিদা পূরণ করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। আর নবজাতকের দেহে মায়ের দুধের মাধ্যমেই শর্করা, আমিষ, স্নেহজাতীয় খাবারসহ সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পৌঁছায়। 

প্রথম ছয় মাস শিশুর অন্য কোনো খাবারের প্রয়োজন তো নেই-ই (এমনকি পানিও নয়), বরং এ সময় শিশুকে অন্য কোনো খাবার দেয়া হলে সেটির কারণে নানা ঝুঁকি পোহাতে হতে পারে। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টির উৎস সম্পূর্ণভাবেই কেবল মা। ছয় মাস-পরবর্তী সময় বাড়তি খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ পান করানো হয়। 

উৎকৃষ্ট বুকের দুধ উৎপাদনের জন্য মায়ের সুষম খাদ্য তালিকার কোনো বিকল্প নেই। তাই গর্ভ-পরবর্তী একজন প্রসূতি নারীকে অন্য নারীদের তুলনায় বেশি খাবার দিতে হবে। কারণ নিজেকে সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি সন্তানকেও বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। বুকের দুধের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে।

১. দানা শস্য, গরুর মাংস, ফুলকপি, কলিজা, ডালজাতীয় খাবার, ডিম, দুধ, মাংস, বাদাম, শাক, ছোলা, কুমড়া, গাজর, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, লবণ, সামুদ্রিক মাছ এ জাতীয় খাবার মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে দিতে হবে যেন বুকের দুধে এগুলোর ঘাটতি তৈরি না হয়। 

২. বাচ্চাকে দুধ পান করানোর আগে পানি বা তরল যেকোনো পদার্থ দুগ্ধদানকারী মায়ের পান করা উত্তম। এতে বেশি দুধ নির্গত হয়ে। ৩. সকাল ১০ থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২০-৩০ মিনিট সময় সূর্যের আলোতে বসা উচিত, যা ভিটামিন-ডি তৈরিতে সাহায্য করবে।

৪. অতিরিক্ত চিনি বা লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 

৫. ডুবো তেলে ভাজা বা বাইরের ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে হবে।

৬. পরিমিত পরিমাণে চা কফি গ্রহণ করতে হবে।

- নাহিদা আহমেদ, পুষ্টিবিদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh