চতুর্থবারের মতো সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন

প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ পেলেন আবারো

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪৩ এএম

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আলোচিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় বাইরে সাবেক ফুটবলার কায়সার হামিদ সমর্থকদের নিয়ে মানববন্ধন করে কাজী সালাউদ্দিনকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানান। 

কিন্তু ভেতরে সারাদেশের কাউন্সিলররা আরেকবারের মতো সাবেক এই কিংবদন্তি ফুটবলারের ওপর আস্থা রেখেছেন। সভাপতি পদে নানা নাটকীয়তার মধ্যে অনেকটা হেসেখেলে বিজয়মাল্য গলায় পরেছেন তিনি।

দেশের ইতিহাসে কোনো ক্রীড়া ফেডারেশনে টানা চারবার ভোটে নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড নেই। গেল ১২ বছরে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া কাজী সালাউদ্দিন ব্যর্থ হয়েছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। বিশেষ করে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স নেমে গেছে তলানীতে। মোটা দাগে বললে, সালাউদ্দিন জমানায় পাঁচটি সাফ ফুটবলে অংশ নিয়ে চারটিতেই গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে নামতে নামতে ১৯৭ নাম্বারে নেমে আসে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। এখন সেটি ১৮৭ তে উন্নীত হলেও খুববেশি পরিবর্তন হয়নি। 

এই সময়টিতে বাফুফে যেমন একটি একাডেমি তৈরি করতে পারেনি, তেমনি একটি আধুনিক জিমনেশিয়ামও স্থাপন করতে পারেননি। সভাপতি হিসেবে তিনি এসব কাজের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। পেশাদার লিগ বিপিএল প্রতি বছর মাঠে গড়ালেও প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ ও পাইওনিয়ার লিগের অবস্থা মোটেও ভালো না। ১২ বছরে ৪৮টি লিগ যেখানে মাঠে গড়ানোর কথা, সেখানে মাত্র ১৮টি লিগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকি ৩০টি লিগ মাঠে না গড়ানোয় উঠে আসেনি নতুন ফুটবলার।

নতুন মেয়াদে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের ৩৬ দফা ইশতেহার বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। তবে আলোচনায় উত্তাপ ছড়ালেও জমল না বাফুফে নির্বাচন। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন হলেও সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন বেশ জমজমাট হয়। চারটি সহ-সভাপতি পদের তিনটিতে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ ইমরুল হাসান, কাজী নাবিল আহমেদ ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। তারা সবাই সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও সমন্বয় পরিষদের মহিউদ্দিন আহমেদ মহী সমান ৬৫টি করে ভোট পেয়েছেন। ফলে চতুর্থ সহ-সভাপতি পদের জন্য এই দুই প্রার্থীর মধ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ অক্টোবর।

নির্বাহী সদস্য পদেও সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের জয়জয়কার। ১৫টি সদস্য পদের মধ্যে নয়টি পেয়েছে তারা। সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মো. জাকির হোসেন, বিজন বড়ুয়া, নুরুল ইসলাম নুরু, মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম প্রমুখ। সমন্বয় পরিষদ থেকে নির্বাচিত ছয়জন হলেন- আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু, আরিফ হোসেন মুন, টিপু সুলতান, আমের খান, সাইফুল ইসলাম ও মহিদুর রহমান মিরাজ।

এবারের নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে সমালোচনার কোনো অন্ত ছিল না। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘সালাউদ্দিন হটাও’ স্লোগানে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছিল; কিন্তু ভোটের ময়দানে ভিন্ন দৃশ্যপট দেখা গেল। সালাউদ্দিন পেয়েছেন ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাদল রায় পেয়েছেন ৪০ ভোট। আলোচিত এ নির্বাচনে ১৩৯ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৩৫টি। 

সমালোচনা উড়িয়ে ফের বাফুফের শীর্ষ পদে বসে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত সালাউদ্দিন। হবেনই না কেন, এবার যে অনেক বিতর্ক উড়িয়ে ধরা দিয়েছে জয়! উচ্ছসিত কণ্ঠে নিজের বিজয়কে নিয়ে তার মূল্যায়ন ছিল এরকম, ‘আমাদের এই জয় ভোটারদের বিজয়। নির্বাচনের আগে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। উত্তরটা দেয়ার ছিল ভোটারদের। ভোটাররা সেই উত্তর দিয়েছে। ভোটারদের আমি ও আমার প্যানেলের পক্ষ থেকে জানাই ধন্যবাদ।’ 

নির্বাচনে বন্ধু শত্রু  আবার শত্রু  বন্ধু হয়ে যায়। এই যেমন ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১৯৮২ সালে ফুটবল মাঠে গণ্ডগোল করায় জেলখাটার কারণে কাজী সালাউদ্দিনের মনোনয়ন বাতিলের আবেদন করা শামসুল হক চৌধুরী এবার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে শত্রু শিবিরে থাকা আমিরুল ইসলাম বাবু একই প্যানেল থেকে নির্বাচন করলেও হেরে গেছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, মাঠের ফুটবল নিয়ে ততটা হয় না। এবার সেই ধারা ভাঙবে বলেই প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমীদের।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh