নামের মিল থাকায় কারাভোগের সাতদিন পর মুক্ত বৃদ্ধ

অভিযুক্ত এএসআই ক্লোজ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২০, ১০:২৯ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০, ১০:৩০ এএম

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ছবি: পটুয়াখালী প্রতিনিধি

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ছবি: পটুয়াখালী প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর গলাচিপা থানা পুলিশের অসতর্কতায় বিনা অপরাধে সাতদিন কারাভোগের পর আদালতের আদেশে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান নামে এক বৃদ্ধকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। 

গতকাল রবিবার (১১ অক্টোবর) বিকালে যুগ্ম ও জেলা জজ আদালতের বিচার মো. আবুল বাসার আইনজীবীর যুক্তি তর্কের ভিত্তিতে ওই বৃদ্ধকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। একইসাথে মুল আসামিকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। 

ভুক্তভোগী বৃদ্ধের আইনজীবী এটিএম মোজাম্মেল হক তপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি অহেতুক এই বৃদ্ধকে হয়রানির করার ঘটনায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

পুলিশের অসর্তকতার বিষয়টি জানতে পেরে এসপি মোহম্মদ হাসান পুলিশের ওই এএসআই  আল আমিনকে ক্লোজ করেছেন বলে নিশ্চিত করেন গলাচিপা সার্কেল সিনিয়র সহকারী এসপি মো. ফারুক হোসেন।

হাবিবুর রহমানের ছেলে মোহম্মদ আবু সালেহ বলেন, গত ৪ অক্টোবর সাদা পোশাকে গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন পরিচয়ে আমার বৃদ্ধ বাবাকে থানায় নিয়ে আসেন। এসময় কারণ জানতে চাইলে এএসআই আল আমিন জানান- বাবাকে কথা কথা বলার জন্য থানায় নেয়া হচ্ছে। থানায় নেয়ার পর পুলিশ জানায় বাবার বিরুদ্ধে অর্থ প্রতারণার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। বাবার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই- এমন কথা পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ তাতে কান দেয়নি। 

এদিকে আদালতে শুনানি চলাকালে ভুক্তভোগী বলেন, ইউনিফরম ছাড়া এক যুবক পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। বিনা কারণে তাকে হয়রানি করার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান আদালতের কাছে।

আদালত সুত্রে জানা গেছে, গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের ‘নাহার গার্মেন্টস‘র মালিক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পিতা- মৃত নূর মোহাম্মাদ মাষ্টার, মুজিব নগর রোড, গলাচিপা পৌর শহরের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালের ৬ আগস্ট বেসরকারী এনজিও ব্র্যাক থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব একাউন্টের (হিসাব নং ২২০০) ঋণের সমপিরমান অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুরের জমাকৃত চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। পরে ব্রাক কর্তৃপক্ষ ২ মে ২০১৩ তারিখে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ গ্রহণ করেননি মর্মে ১৯ জুন ২০১৩ তারিখ লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা ঋণ গৃহীতা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় পটুয়াখালীর যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাত জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের সশ্রম দণ্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ অর্থাৎ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধের আদেশ দেন। রায়ের দিন ঋণ গৃহিতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। 

ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানা পুলিশের এএসআই আল আমিন কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে ৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh