ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে বিভক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০, ০৮:৩২ পিএম

সরকারি চাকুরীতে কোটা সংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আজ একদল নেতা ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে তারা ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক ও পরিষদের যুগ্ম আহবায়কদের একজন মুহাম্মদ রাশেদ খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। এতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে সংগঠনটিতে।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা সংগঠনটির একটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছেন- যাতে আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এপিএম সোহেলকে।

এপিএম সোহেল গণমাধ্যমকে বলছেন, তারা সংগঠন ভাঙেননি, বরং অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সংগঠনকে রাজনীতিকিকরণের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।

তিনি বলেন, মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে মানুষের আবেগ ও বিশ্বাস নিয়ে নোংরা রাজনীতি, আর্থিক অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিকভাবে সংগঠন পরিচালনা, ত্যাগী ও দুঃসময়ের সহযোদ্ধাদের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অবমূল্যায়ন করা এবং সম্প্রতি ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলাকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতিকীকরণের অপচেষ্টার প্রতিবাদে ও সাংগঠনিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে আজকের সংবাদ সম্মেলন।

তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে ডাকসুর ভিপি হওয়ার পর ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হওয়া নুরুল হক নুর গণমাধ্যমকে বলছেন, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিলো এবং তাতে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকেও অনেকে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা যখন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি তখন ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদের মতো সংগঠন করেছি। আর ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নামে যারা নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে তারা বেশিরভাগই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তাদের সম্পৃক্ত করেছিলাম। এখন সরকার তাদেরকে ব্যবহার করছে আমাদের হেয় করার জন্য। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাতেই কখনো মামলা হচ্ছে বা কখনো আমাদের অবাঞ্ছিত করছে।

নুরুল হক নুর জানান, তারা শিগগিরই নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ গঠন করবেন এবং এটা জেনেই সরকার তাদের নানা ভাবে দমানোর চেষ্টা করছে। কারণ বাংলাদেশে এখন অগণতান্ত্রিক শাসন চলছে ও রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলতে পারছেনা। সেখানে বাধা অতিক্রম করে আমরা একের পর এক সফল ছাত্র আন্দোলন করেছি। সরকার এসব কারণেই এখন কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এমন কয়েকজনকে ব্যবহার করছে। তারাই আজ সংবাদ সম্মেলন করেছে আমাদের বিরুদ্ধে।

তবে সরকারের সাথে তাদের যোগসাজশের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হিসেবে আজ যার নাম ঘোষণা করা হয়েছে সেই এপিএম সোহেল। তিনি বলছেন, সংগঠনটিতে অন্যায় নিয়ে কিছু বললেই এসব ট্যাগ দেয়া হতো তাদের (নুর-রাশেদের) পক্ষ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে আংশিক কমিটি ঘোষণা দিয়ে লিখিত বক্তৃতায় বলা হয়েছে, নুরের একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি করার প্রক্রিয়া শুরু হয় যা একপ্রকার স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত এবং সেই সাথে চরম বিরোধ সৃষ্টি করে সংগঠনের অভ্যন্তরে।

এতে বলা হয়, গুটিকয়েক নেতার অহমিকা, অহংকার, একরোখা সিদ্ধান্তের কারণে সাংগঠনিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে আমাদের হাজারো ত্যাগের বিনিময়ে গড়ে ওঠা সংগঠন। এরই ফলশ্রুতিতে একে একে বিভিন্ন কেলেঙ্কারি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জার এবং দুঃখজনক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নুরুল হক নুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পর থেকেই তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। সম্প্রতি তিনিসহ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনেও মামলা করেছেন ওই শিক্ষার্থী।

নুরুল হক নুর বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের রাজনীতিকে নষ্ট করার জন্য, আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তিনি এই কাজগুলো করছেন। যে মামলাগুলো করছেন, আমি মনে করি, কোনটার আইনগত ভিত্তি নেই। তাই মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মামলাগুলোকে রাজনৈতিক আখ্যায়িত করে তিনি সেগুলোকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করবেন বলে জানিয়েছিলেন তখন। নুরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বাদী ক্যাম্পাসে এখনো তার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই সংগঠনটির একাংশের নেতারা তিনিসহ দুজনকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করলো যাতে আহবায়ক হয়েছেন এপিএম সোহেল।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh