পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীমুক্তির বিলাসিতা

মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০১:৫২ পিএম

একবিংশ শতাব্দীর সভ্য সমাজে নারী কি সত্যি নির্যাতিত, নিপীড়িত, শৃঙ্খলিত, মূল্যহীন এবং দাসী? সমাজে নারী বৈষম্যের কোনো রূপ কি বিদ্যমান? নারী কি তার মতো করে সব ভাবতে পারে বা করতে পারে? অপরাধের সব দায় কি কেবল নারীর? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর তথাকথিত নারীবাদী, প্রগতিশীল বা উচ্চশিক্ষিতদের কাছে নাই। কেননা কোনো না কোনোভাবে এরা সবাই দায়ী।

যে সমাজ প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো চরম নারী বিদ্বেষীদের মাথার তাজ মনে করে বা রবীন্দ্রনাথের মতো প্রচণ্ড মানবপ্রেমির হাতে ভবতারিণী হয়ে যায় মৃণালিনী, অথবা শেক্সপিয়রের নাটকে যখন ম্যাকবেথের স্ত্রী নামহীন লেডি ম্যাকবেথ হয়ে থাকে এবং তাদের শিক্ষায় আমাদের শিক্ষিত করা হয়, সে সমাজে নারীমুক্তি সুদূরপরাহত।

লিঙ্গগত পার্থক্য প্রকৃতিদত্ত। এ পার্থক্য মানব কল্যাণেই নিহিত। নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক পৃথিবীকে ফুলের বাগানে পরিণত করার কথা। কিন্তু কোনো কোনো নারীবাদী পার্থক্য আর বৈষম্যকে এক করে ফেলেন! এদেশের নারীবাদীরা জেন্ডার সত্তাকে স্বীকার করেন না। কিন্তু শরীরতত্ত্বীয় পার্থক্যের কথা বলেন। এ দুটি পরস্পরবিরোধী দর্শন বা চিন্তা। মূলত জেন্ডার তত্ত্ব ও শরীরতত্ত্বীয় পার্থক্যকে একপাশে রেখে পুরুষ কর্তৃক নারীকে অধস্তন করার প্রবণতাকে চিহ্নিত ও নিরসনের পথ তৈরি করা একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।

এ সমাজে নারীবাদী শিক্ষাকে পুরুষের চিন্তাচেতনার প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করায় উভয় পক্ষ। পুরুষ তার একক কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে নারীবাদকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সাধারণীকরণের মাধ্যমে নারীর প্রতি সামষ্টিক ঘৃণা ছড়ায়। অন্যদিকে কিছু নারীবাদী এর মূল শিক্ষাকে না বুঝে পুরুষের প্রতি নারীর বিদ্বেষ সৃষ্টিতে কাজ করে। এমনকি সেসব নারীবাদী অন্য নারীদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন ভাবেন। এমন ভাবনা ও আচরণে কিছু নারীবাদী যেমন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান, তেমনি অন্য নারীরা পুরুষ-নারীতান্ত্রিক নিষ্পেষণের শিকার হয়ে পড়েন।

পুরুষতন্ত্রের প্রাণ ক্ষমতা। সে ক্ষমতার জন্য পুঁজিবাদী আচরণ ও সমাজের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তি বনে যাওয়া সব পুরুষ ও নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। আবার পুরুষ বা নারী যদি একক ক্ষমতার চর্চা করেন তখন তারা পিতৃতান্ত্রিক সমাজভুক্ত হন। এ অবস্থায় নারী বা পুরুষ আচরণের জন্য পুরুষতান্ত্রিক বা মানবীয় চিন্তা ও চর্চার জন্য নারীবাদী হতে পারেন। এভাবে বৈষম্য ও প্রতিকারের উপায় বের করতে পারলেই নারী ও পুরুষ কেবল মানুষরূপে সমাজে পাশাপাশি চলতে পারবে। নচেত ব্যবধান যোজন যোজন বৃদ্ধি পাবে।

একটি ছবির কথা বলা দরকার যা পুরো মানব জাতির ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ছবিটিতে দেখানো হয়ে একজন মা কেবল নয় মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার পর আর কোনো দায়িত্ব পালন করে না। কিন্তু একজন বাবা সন্তানের জন্মগ্রহণের পর থেকে সারা জীবন তার মাথায় সন্তানের কল্যাণের কথা ভাবেন এবং সে অনুসারে কাজ করেন। এমন ছবির নিচে নারী-পুরুষের বাহবা সূচক হাজারো সমর্থন। কারো কারো মতে যাদের বাবা মারা গেছে, তারাই কেবল জীবনের অর্থ বোঝে! অর্থাৎ মা মারা গেলেও খুব একটা অসুবিধা হয় না।

পুরুষ তার দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ পরিবর্তন করুক-সমাজে সব ধরনের বৈষম্য নিরসন হবে। এর পাশাপাশি যে সমস্ত নারীর মধ্যে পৌরুষত্ব অর্জনের চেষ্টা, তাদের মনুষ্যত্ব অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। নারীবাচক বা পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার কম করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh