লুইস এলিজাবেথ গ্ল্যুকের কবিতা

শিল্প-সংস্কৃতি ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০৫:০৯ পিএম

এবার সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন কবি লুইস এলিজাবেথ গ্ল্যুক। গ্ল্যুক ১৯৪৩ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন, লঙ আইল্যান্ডে বেড়ে ওঠেন। সারা লরেন্স কলেজ, উইলিয়াম কলেজ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। আঠারো বছর বয়সে কবিতাপ্রেম, পঁচিশ বছরে প্রথম কবিতার বই ‘ফার্স্টবর্ন’ সাড়া ফেলে দিয়েছিল সাহিত্যের জগতে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়েছে পরিধি। ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল, পুলিৎজার পুরস্কার জুটেছে বেশ আগেই। তাঁর কবিতার অস্থিমজ্জায় কৌশলের অভিনবত্ব আর স্পর্শকাতরতা। কবিতায় তিনি শিল্প প্রকৌশলগত ভিন্নতার কারণে বহুল প্রশংসিত। আশ্চর্য ভাবনার এই আমেরিকান কবির ৩টি কবিতার ভাষান্তরিত রূপ রইলো পাঠকের জন্য।

স্বীকারোক্তি

আমি নির্ভয় বললে-
এটা সত্য হবে না।
আমি অসুস্থতায় ভয় পাই,
অপমানে আর সবার মত-
আমারও স্বপ্ন আছে।

তবে আমি তাদের
আড়াল করতে শিখেছি-
নিজের পূর্ণতাকে
রক্ষা করতে।

সমস্ত ভালো ক্রোধকে
আকর্ষণ করে বোনের মত,
বর্বরতা থাকে তাদের মধ্যে;
কোন আবেগ-ই থাকে না,
থাকে শুধু হিংসা।

কবুতরের দৃষ্টান্ত

একটা গ্রামে বাস করত একটা কবুতর। মুখ খুললে মিষ্টতা বেরিয়ে আসে,
চেরি ফলের চারপাশে রুপালি আলোর মতো শব্দ করে। তবে পাখিটা মজা
পায়নি। দেখতে পেলো গাছের নিচে গান শোনার জন্য গ্রামবাসী। পাখির
মনে এমন ভাবনা আসেনি যে- সে তাদের চেয়ে উন্নত। গানের জন্য কিছুটা
হলেও তাদের মত হয়ে মানুষের অনুভূতির হিংস্রতা অনুভব করতে চেয়েছিল।
তাই মানুষের হয়ে ওঠে সে কবুতর। আবেগ খুঁজে পেলো, হিংসা
খুঁজে পেলো, প্রথমে সংঘাত পেয়েছিল, তারপরে পৃথক আবেগ এবং এইগুলো
সংগীতের মধ্যে পড়তো না। এইভাবে পাখির গান বদলে গেলো, মানুষ হয়ে
ওঠার আকাক্সক্ষার মিষ্টি সমস্ত নোট চ্যাপ্টা হতে থাকে।

পৃথিবী ছোট থেকে ছোট হয়ে এলো; মিউট্যান্ট প্রেম থেকে পড়েছিল চেরিগাছের
ডালের মত, ফলের সঙ্গে মিশে রক্তাক্ত দাগ ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং এটাই সত্য,
কেবল শিল্পেরই নিয়ম নয়-

আপনার কাঠামোটি পরিবর্তন করেন এবং আপনি আপনার প্রকৃতি পরিবর্তন করেন।  
তখন সময় আমাদের পাল্টে দেবে।

নকটার্ন

মা মারা গেছে গত রাতে-
মা যে কখনও মরে না।
হিমেল বাতাস ছিলো,
শীতকাল দূরে থাকলেও
শীতার্দ্র বাতাস ছিলো।
মে মাসের দশম দিন-
পেছনের বাগানে কচুরিপানা
আর আপেল ফুল ফুটেছিল।
আমরা মারিয়ার গান শুনতে পাচ্ছিলাম
চেকোস্লোভিক গান-
আমি কি একা?
এই জাতীয় গানগুলি,
আমি একা একা-
মা নাই, বাবা নাই
আমার মস্তিষ্ক ওঁদের ছাড়া
এতো খালি মনে হয়!
পৃথিবী থেকে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে;  
থালা বাসনগুলি ডুবে ছিল,
ধুয়ে গেছে তবে তা সাজানো হয়নি।  
পূর্ণিমার চাঁদের নিচে মারিয়া
কাচা কাপড়গুলো ভাঁজ করছিলো;  
চাদর যেন শুকনো সাদা
জ্যোৎস্নার আয়তক্ষেত্র হয়ে গেল?  
আমি একা একা, তবে সংগীতে
আমার নির্জনতা, আমার আনন্দ।  
এটি ছিল নবমী, অষ্টমীর মতো
একটা দশমীর দিন।  
মা তার বিছানায় শুয়েছিলেন-
তার দু-হাত ছড়ানো,
মাথা তার মধ্যে ভারসাম্যে রয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh