ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০৯:২৭ পিএম
ছবি: স্টার মেইল
ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত সর্বকনিষ্ঠ ভাই শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বুলেটের আঘাতে একটি ফুল কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়।
আজ রবিবার (১৮ অক্টোবর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এই কথা বলেন।
ছোট ভাইয়ের স্মৃতিচারলণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৪ সালে রাসেলের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তার জীবনটা শেষ হয়ে যায় ..একটি ফুল কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায় আর তা ফুটতে পারেনি। বেঁচে থাকলে ৫৬ বছর বয়স হতো শেখ রাসেলের। শেখ হাসিনাকে সে ডাকতো বুবু বলে। ছোট ভাইয়ের জন্মদিনে সেই কথা বলে আক্ষেপ করলেন বড় বুবু।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। ভয়াল সেই রাতে জাতির পিতার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের সঙ্গে প্রায় ১১ বছর বয়সী শেখ রাসেলকেও প্রাণ দিতে হয়েছিল। বিদেশে থাকায় বেঁচে যান দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
শেখ রাসেলের জন্মের ক্ষণটি ঘিরে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনাকর সেই মুহূর্তগুলো স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা ছোট্ট শিশু আসবে আমাদের পরিবারে। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা- আমরা সবাই খুব উৎসাহিত এবং বেশ উত্তেজিত ছিলাম যে কখন সেই শিশুর কান্নাটা আমরা শুনবো, কখন তার আওয়াজটা পাবো, কখন তাকে কোলে তুলে নেব। আর সেই ক্ষণটি যখন এলো তা আমাদের জন্য অত্যন্ত একটা আনন্দের সময় ছিলো।
সেই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যস্ততার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ওই মুহূর্তে চট্টগ্রামে ছিলেন। সাথে সাথে আমরা টেলিফোন কল করে আব্বাকে জানালাম।
শেখ হাসিনা বলেন, ছোট্ট শিশুটি আমাদের চোখের মনি ছিল। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য তার, ১৯৬৪ সালের ১৮ই অক্টোবরে তার জন্ম। এরপর ১৯৬৬ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমার বাবা ছয় দফা দিলেন, তিনি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ওই ৬৬ সালেই তিনি মে মাসে বন্দি হয়ে গেলেন। ছোট্ট রাসেল তার কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই বাবা কারাগারে। প্রকৃতপক্ষে তার সাক্ষাৎ হলো কারাগারেই। বাবার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গেলে তাকে সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে যাওয়া জন্য রাসেল কান্নাকাটি করতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন বাবা মুক্তি পান তখন যেই জিনিসটা সব সময় দেখতাম রাসেল সর্বক্ষণ, মনে হয় ওর ভেতরে একটা ভয় ছিল যে কোনো মুহূর্তে বুঝি বাবাকে হারাবে। তাই তিনি যেখানেই যেতেন যেই কাজই করতেন খেলার ছলে ছলে কিছুক্ষণ পরপরই একবার করে সে দেখে আসতো যে বাবা ঠিক আছে তো।
শেখ রাসেল শৈশব থেকেই সেনাবাহিনীর সদস্য হতে চাইত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন আমরা গ্রামে বেড়াতে যেতাম গ্রামের যত শিশু তার বয়সী সবাইকে সে একত্রিত করতো এবং তাদেরকে দিয়ে সে প্যারেড করাতো। আর শুধু প্যারেড করিয়ে খালি হাতে ফেরাত না প্রত্যেককে সে টাকা দিতো আর তাদেরকে কাপড় চোপড় কিনে দিতে হতো। সেজন্য তাদের মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব শিশুদের অনেক কাপড়-চোপড় কিনে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যেতেন এবং সেগুলো রাসেলের ইচ্ছামত প্রত্যেকটা শিশুকে দেয়া হতো।
শেখ রাসেলের নাম কার নামানুসারে রাখা হয়েছিল তাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাসেল নামটি তার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছার দেয়া উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্বা বার্ট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে, নিজের ছোট সন্তানের নাম রাসেল রাখলেন।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে ‘শহিদ শেখ রাসেলে ম্যুরাল’ নির্মাণ করে শেখ রাসেলের স্মৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করায় সবাইকে ধন্যবাদও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই। ওই স্কুলের ছাত্র ছাত্রী যুগ যুগ ধরে যারা পড়াশোনা করবে তারা এইটুকুই শিখবে, এইটুকুই জানবে যে একটা ছোট শিশু ছিল এই স্কুলে কিন্তু সেই শিশুটাকে বাঁচতে দেয়া হয় নাই। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক সেটাই আমরা চাই।