সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২০, ০৩:২৯ পিএম
ছবি: সুবর্ণচর প্রতিনিধি
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চরজব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের নুরজাহান বেগম (৫৭) নামে এক নারীকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
ওই নারীর ছেলে হুমায়ুনসহ তার সাত সহযোগী মিলে মাকে হত্যা করে খণ্ডিত টুকরোগুলো পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।
নৃশংস রহস্যাবৃত এ হত্যার ঘটনায় প্রথমে ভিকটিমের ছেলে হুমায়ুন কবির হুমা (২৮) বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে নামলে হত্যার সাথে সরাসরি সন্তানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একইসাথে তার সাথে তার সাত সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
পুলিশ বলছে, সাত আসামির মধ্যে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দুইজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। একই সাথে আটক নিহতের ছেলের বন্ধু নিরব ও কসাই নুর ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাপাতি, বালিশ, কোদাল, ভিকটিমের ব্যবহৃত কাপড় উদ্ধার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১১টায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্রগ্রাম রেঞ্চের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নিহত নারীর ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে ছিল। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মা রেখে এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চার লাখ টাকা সুদের উপর ঋণ নেয়। ঋণ রেখে দেড় বছর আগে বেলাল মারা যায়। এরপর বেলালের ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য তারপরের সংসারের ভাই হুমায়ুনকে পাওনাদাররা চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। হুমায়ুন তার মাকে এ বিষয়ে অবহিত করে। তার মা হুময়ানকে তার ১৩ শতক জমি বিক্রি করে এ ঋণ পরিশোধ করার জন্য বলে। হুমায়ন প্রতি উত্তরে তার মাকে জানান মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে বেলালের ঋণ পরিশোধ করা হোক। এতে তার মায়ের জোর অসম্মতি ছিল।
অপরদিকে ওই নারী তার ভাই দুলালের কাছে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পেত। পাওনা টাকা পরিশোধ করার জন্য সে ভাইকে প্রায় চাপ প্রয়োগ করতো। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন ওই নারীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। এছাড়াও ওই নারীর বাড়ির পাশের প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদের বেলালের জমির প্রতি লোভ ছিল। তাই তারাও হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করে।
হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে ২ শতাংশ হামিদকে, বাকি ৮ শতাংশ ইসমাইলকে দেয়া হবে বলে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর মায়ের জমি সমান ৫ ভাগে ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও কসাই নুর ইসলামকে দেয়া হবে। এ প্রতিশ্রুতিতে সকল ব্যক্তিরা গত (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি সেতুর উপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরে হুমায়ুন, কালাম, সুমন ও অন্য আসামিদের সহযোগিতায় ওই রাতের কোনো এক সময়ে ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে নুরজাহানকে হত্যা করে বটি, চাপাতি, কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।
প্রেস ব্রিফিংকালে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। নুরজাহান উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত আবদুল বারেকের স্ত্রী। তিনি আট ছেলে ও এক মেয়ের মা।
গত ৭ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর জাহাজমারা গ্রামের প্রভিডা ফিডে পিছনের একটি ধানক্ষেত থেকে ওই গৃহবধূর টুকরো টুকরো মরদেহের সন্ধান পায়।
এর আগে ছেলে হুমায়ুন জানিয়েছিল, বুধবার ভোর থেকে তার মা নিখোঁজ ছিল। পরে স্থানীয় এক নারী বিকালে ধানক্ষেতের আইলে শামুক খুঁজতে এসে একটি টুকরো টুকরো মরদেহ দেখতে পায়। পরে সে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মায়ের মরদেহ শনাক্ত করে।