টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০১:৫৫ পিএম

ছবি: বাগেরহাট প্রতিনিধি

ছবি: বাগেরহাট প্রতিনিধি

ভারী বর্ষণে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো। 

ভেসে গেছে হাজার হাজার মৎস্য ঘের ও পুকুর। তাই পানি কমতে শুরু করলেও মুখে হাসি নেই মাছচাষিদের মুখে। কারণ ঘেরের মাছ বের হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে।

গত বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) ভোর রাত থেকে শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণে এই দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামের মাছচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার টানা বৃষ্টিতে আমার মাছের ঘের তলিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে। শুধু আমার নয়, এলাকার অনেকের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে। অনেক মাছচাষি নিঃস্ব হয়ে গেছেন।


শরণখোলা উপজেলার রাজৈড় গ্রামের মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী সোহেল ফরাজী ও সোহবান শেখ বলেন, এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। কিছুদিন পরে মাছ বিক্রি করার ইচ্ছা ছিল। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেল। এখন কীভাবে চলব, জানি না।

শরণখোলা উপজেলার গোলবানু, মহিবুন্নাহার, ছাহেরা বেগম, হাওয়া বেগম, শাহিনুর বেগমসহ কয়েকজন বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের থাকার ঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘর সব ডুবে গেছে। দুইদিন ধরে দোকান থেকে চিড়া, মুড়ি ও রুটি কিনে খেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি না নামলে আমাদের দুঃখের আর সীমা থাকবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন, বৃষ্টির পানিতে উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিতে বাগেরহাটের ৯ হাজার ৭৬১টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে চাষিদের প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি বলে দাবি করেছেন বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি মহিতুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটি দুর্যোগেই বাগেরহাটের মাছচাষিদের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু সরকারি হিসাবে এসব ক্ষতির পরিমাণ কম বলা হয়। এবারের বৃষ্টিতে বাগেরহাটের প্রায় ১৫ হাজার ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। চাষিদের ক্ষতি পোষাতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।


জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. খালেদ কনক বলেন, অবিরাম বর্ষণে বাগেরহাটের ৯ হাজার ৭৬১টি ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে চাষিদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাষিদর সাথে যোগাযোগ করছি। এই ক্ষতি পোষাতে তাদের প্রশিক্ষণ ও সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনার জন্য চেষ্টা করার কথা বলেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, অতিবর্ষণের কারণে বাগেরহাট জেলায় বরাবরের মতো এবারো কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভাটির সময় আবার সেই পানি নেমেও গেছে। এতে কিছু মাছের ঘেরও ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে কী পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা সেই তালিকা প্রস্তুতের কাজ করছি। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার আমরা বিভিন্ন উপজেলায় পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোয় খাদ্যশস্য দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh