নাসরিন জেরিন
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০৯:২১ এএম
সন্তান যখন খুব ছোট তখন থেকেই তার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে, যেন সে কোনোভাবেই নিপীড়নের শিকার না হয়। শিশু অল্প অল্প করে বুঝতে শুরু করার সময় থেকেই তাকে তার শরীর, ‘ভালো স্পর্শ-মন্দ স্পর্শ’ ও ‘স্পর্শ সুরক্ষা বিধি’ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিতে হবে।
আজকে এ প্রসঙ্গে রইল কয়েকটি টিপস-
শিশুর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রথমে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিন। বিভিন্ন বই, অনলাইনসহ নানা মাধ্যমে এ সম্পর্কে প্রচুর শিক্ষামূলক নির্দেশনা পাবেন। প্রয়োজনে এগুলোর সাহায্য নিন। ২ বছর বয়স থেকেই শিশুকে শেখান শরীরের কয়েকটা অংশ প্রাইভেট পার্টস ও তার শরীরে একমাত্র তারই অধিকার আছে। একইসাথে এটাও শেখান, কেউ যদি তার হাত ধরতে, জড়িয়ে ধরতে বা চুমু খেতে চায়- তার ‘না’ বলার পুরো অধিকার আছে।
অনেক মা শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের নানা ধরনের নামকরণ করে থাকেন। এতে কোনো ভুল না থাকলেও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক নাম জানাটা শিশুর জন্য দরকার।
শিশুর সাথে সহজ বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। তাকে বোঝান যে, আপনি ও ওর বাবা তাকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। তাই আপনাদের যেন এইসব বলতে সে ভয় না পায়। শিশুকে বোঝান কেউ তার গায়ে হাত দিলে যদি অস্বস্তি হয়, তাহলে আপনাকে এসে জানাতে। এসব বিষয় শেখানোর সময় খুব বেশি সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করবেন না। মাথায় রাখতে হবে শিশু যেন আপনার সাথে কথা বলতে বা কোনো প্রশ্ন করতে ভয় না পায়। তাকে গোসল করানো বা ঘুম পাড়ানোর সময় গল্পচ্ছলে এই কথাগুলো বোঝাতে হবে।
ভালো স্পর্শ বা গুড টাচ কী শিশুকে তা বোঝান। কেউ তার গায়ে হাত দিলেই তা ব্যাড টাচ নয়। যেমন বিভিন্ন সময়ে ডাক্তার দেখাতে হয়। নিতম্বে ইনজেকশনও দিতে হয়। আবার মা-বাবাও শিশুদের জড়িয়ে ধরে আদর করে। ভালো আর খারাপ স্পর্শের পার্থক্য নিয়ে শিশুর বেশ কনফিউশন থাকতে পারে; তাই ধৈর্য ধরে বুঝাতে সাহায্য করুন।
শিশুকে ‘না’ বলতে শেখান। কেউ তার শরীরে হাত দিলে সেটা যদি তার পছন্দ না হয়, তাহলে সে যেন তক্ষুণি না বলতে পারে। তাকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। প্রয়োজনে ছবির সাহায্য নিন। বইতে হিউম্যান বডির ছবি দেয়া আছে সেই ছবি দেখিয়ে শিশুর শরীরের কোন অংশে কারও হাত দেয়া উচিত নয় এটা শেখান। নিজে ছবি এঁকেও তা দেখাতে পারেন।
শিশুর কথাকে গুরুত্ব দিন। হয়তো শিশু আপনাকে এসে জানাল কেউ তার শরীর ছুঁয়েছে। এটা হেসে বা তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দেবেন না। থেরাপিস্টরা মনে করেন যে, কোনো ছোঁয়া যদি শিশুর অস্বস্তির কারণ হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই ব্যাড টাচ।
কেউ খারাপ স্পর্শ করলে শিশুকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেগুলো তাকে গুছিয়ে বলুন। তাকে বোঝান, তুমি খারাপ কিছু করনি। যে তোমার সাথে এমন করছে, সেই বরং খারাপ। কেউ যদি তাকে খারাপভাবে স্পর্শ করে, তবে সে যাকে বিশ্বাস করে, এমন কাউকে ঘটনাটি খুলে বলতে হবে, বুঝিয়ে দিন। বলুন, এমন কোনো ঘটনা গোপন রাখবে না, যা তোমাকে বিব্রত বোধ করায়।