ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২০, ১২:৪০ পিএম
‘ঝিনাইদহের যস, খেজুরের রস’। শীত এখনো পুরোপুরি শুরু না হলেও বিকেলের পর থেকে ঠান্ডা বাতাস অনুভূত হচ্ছে। আর তাতে বোঝা যাচ্ছে শীত আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হচ্ছে।
আর এতে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার গাছিদের মধ্যে আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে খেজুরগাছ তোলা ও ঝোড়ার। এ কারণে মহেশপুরের গাছিরা এখন মহাব্যস্ত।
আগাম রস সংগ্রহ করতে উপজেলার গ্রামীণ জনপদের সর্বত্রই খেজুরগাছ ঝোড়া শুরু হয়েছে। গাছিরা আগেভাগে রস সংগ্রহের উপযোগী করে গড়ে তুলছেন গাছ। আর কয়েকদিন পর থেকেই গ্রামবাংলায় শুরু হবে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। চারদিকে খেজুরের রসে তৈরি হবে লোভনীয় নলেন গুড় ও পাটালি। রস জ্বালিয়ে ভেজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। দানা, ঝোলা ও নলেন স্বাদ ও ঘ্রাণে গ্রামবাংলার রসনা তৃপ্তিতে খেজুরের গুড়-পাটালির কোনো বিকল্প নেই।
একসময় মহেশপুর উপজেলা খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ ছিল। অতীতে এখানকার খেজুর রসের যে যশ ছিল, দিনে দিনে এখন তা হারাতে বসেছে। সম্ভাবনাময় এ খাতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমান আর আগের মতো রস, গুড় উৎপাদন হয় না। সুঘ্রাণ নলেন গুড় উপজেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রাম ছাড়া পাওয়া যায় না। তা আবার চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। তারপরও যে রস ,গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা দিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়।
এ বছরও ব্যতিক্রম হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শহরের লোকজন গ্রামের গাছিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। কেউ কেউ গাছিদের কাছে অগ্রিম টাকা তুলে দিচ্ছেন ভালো রস, গুড় ও পাটালি পাওয়ার আশায়। অগ্রিম টাকা পেয়ে অনেক গাছি রস সংগ্রের উপকরণ কিনছেন।
উপজেলার শংকরহুদা ও বাথানগাছী গ্রামের গাছি আজগার আলী বলেন, এ বছর একটু আগেভাগেই গাছ ঝোড়া বা কাটা শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই রস সংগ্রহের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
একই গ্রামের গাছি করিম বলেন, ভাটার কারণে অনেক খেজুরগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখন তেমন বেশি গাছ না থাকায় অনেকে খেজুর রস সংগ্রহে তেমন আগ্রহ দেখান না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হসান আলী জানান, এ উপজেলায় প্রায় পাঁচ হেক্টর জমিতে খেজুরের চাষ করা হয়। বিভিন্ন চাষে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকি কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় আমরা খেজুরচাষিদের সহযোগিতা করতে পারি না। তারপরও চেষ্টা করছি। মহেশপুরের খেজুরের রস একটি ঐতিহ্য। তাই এটি ধরে রাখতে বেশি করে খেজুরগাছ রোপণে আমরা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছি। ভবিষ্যতে খেজুরচাষিদের সহায়তা করা হবে।