চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২০, ১০:৪৭ এএম
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ মধ্যরাত থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ আহরণ নামছে জেলেরা।
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী উপকূলীয় এলাকায় আজ মধ্যরাত থেকে শুরু হবে জেলেদের মাছ ধরার উৎসব। এখন নদীর বুক জুড়ে থাকবে শুধু জেলে আর নৌকা। আবারও সরগরম হয়ে উঠবে জেলেপাড়া। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে আসবে তাজা ইলিশ কিনতে। আবারও ইলিশ ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের সর্ববৃহৎ ইলিশের আড়ৎ চাঁদপুরে। চাঁদপুরের অর্ধশত জেলে আজ মধ্যরাত থেকেই তাদের নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে নামবে।
চাঁদপুরে ৫১ হাজার ১৯০ জন জেলে আছে। এদের মধ্যে ৫০ হাজার জেলের জন্য সরকার নিষেধাজ্ঞার সময় ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এ চালে তাদের সংসার চালানোর যাবে না বলেও দাবি করেন জেলেরা। অনেক জেলে দাবি করেছে তারা পুরো ২০ কেজি চাল পায়নি। পেয়েছে ১৬ থেকে ১৭ কেজি করে। আবার অনেকেই একেবারেই চাল পায়নি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট নদীকেন্দ্র, চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিছুর রহমান জানান, আমাদের দেশের জেলেদেরকে যে ২২দিন নিষেধাজ্ঞার সময়ে দেয়া হয়েছে এবং তারা সরকারের সেই আইন মেনে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থেকেছে। পক্ষান্তরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে জেলেরা এসে কোনো নিয়ম নীতি না মেনে আইন অমান্য করে এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমাদের দেশের জলসীমায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরে নিরাপদে ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নদীতে ছুটে আসে। জাটকা সংরক্ষণ, অভায়শ্রম বাস্তবায়ন করা ও প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম পাড়ার সুযোগ করে দেয়ায় ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার জন্য এ বছর ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর এই ২২ দিনকে মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, প্রতিদিনই নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তারপরও এক শ্রেণির অসাধু জেলে দিনে-রাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নদীতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬ হাজার কেজি ইলিশ ও ৭ কোটি মিটার জাল জব্দ করেছে। ৫ শতাধিক নৌকা আগুনে পুড়িয়ে এবং পানিতে ডুবিয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় দুই শতাধিক জেলের জেল-জরিমানা করা হয়েছে। আর জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা।
বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং ইলিশ যেন জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এবারও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি হবে এমন প্রত্যাশা সকলের।
উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর থেকে আজ ৪ নভেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ সারাদেশের ছয়টি অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সকল ধরনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন সরকার।