দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২০, ১২:১০ পিএম
ছবি: দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি পুষ্টিকর ও রসালো ফল বারি মাল্টা-১ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। দিন দিন এই অঞ্চলে এই জাতটির চাষ বেড়েই চলেছে।
বারি মাল্টা-১ উচ্চ ফলনশীল ও সুস্বাধু ফল। মূলত মাল্টা আমাদের দেশি ফল না হলেও খুব সম্প্রতি আমাদের দেশে অনেকে ছোট পরিসরে মাল্টা চাষ করছেন।
বারি মাল্টা-১ বাংলাদেশে উদ্ভাবিত একপ্রকার ফল। এটির স্বাদ ও গন্ধ সাধারণ মাল্টার চেয়ে ভালো। বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা বারি-১ চাষাবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু ফল। সাইট্রাস ফলের মধ্যে এটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে বারি মাল্টা উদ্ভাবন করেন। এর বীজ বারি মাল্টা-১ নামে জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন লাভ করেছে। বীজ ও কলম দুভাবেই মাল্টার চাষ করা যায়। খাগড়াছড়ি ছাড়াও বর্তমান দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে বারি মাল্টা-১ চাষ হচ্ছে এবং চাষিরা সফলতা পাওয়া শুরু করেছেন।
মাল্টায় আছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, চর্বিমুক্ত ক্যালরি, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও ক্ষতিকারক জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো অসাধারণ ক্ষমতা। তাই সব পরিবারের কাছে মাল্টা একটি জনপ্রিয় ফল।
বোচাগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মাল্টাচাষি মো. সৈয়দ আলীর ও ২ নম্বর ইশানিয়া ইউনিয়নের মো. আজাহারুল ইসলামের মাল্টার বাগানে ঢুকতেই যেন চোখ জুড়ে যায়। চারদিকে সবুজের হাতছানি। সবুজ পাতা আর মাল্টাগুলো দেখে মনও ভরে যায়।
সৈয়দ আলী জানান, ২০১৭ সালের দিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বারি-১ জাতের ৬০টি মাল্টাগাছ এনে সেগুলো রোপণ করি। এ বছর মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে। এবার প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি। এছাড়া অনেক কৃষক আমার বাগান থেকে গাছের ডাল নিয়ে কলম করে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন।
আজাহারুল জানান, আমি তিন বছর আগে বারি-১ জাতের ৬০টি মাল্টাগাছ রোপণ করি। এরপর পরিচর্যা শুরু করি। ফল এলে আমি বিক্রি করি না। আত্মীয়স্বজনের বাসায় দিতেই মাল্টা শেষ হয়ে যায়।
উপজেলার বকুলতলা এলাকার মাল্টাচাষি প্রভাষক মো. হুমায়ুন জলিল জানান, প্রায় ৪ একর জমি ইজারা নিই। তরমুজ চাষাবাদের পাশাপাশি ১ হাজার ৫০০ বারি-১ জাতের মাল্টার চারা রোপণ করি। আমার প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সামনের বছর কিছু গাছে ফল আসবে।
বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আরিফ আফজাল জানান, উপজেলায় ১৪ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে, মাল্টা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে এই উপজেলায়। এই অঞ্চলের চাষিরা মাল্টা বারি-১ চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন। আর আমরা মাল্টাচাষিদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে বোচাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছন্দা পাল বলেন, মাল্টা একটি পুষ্টিকর ফল। উপজেলায় মাল্টা বারি-১ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। ভবিষ্যতে এর আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা করছি। এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী।