হাসপাতালে এএসপি শিপনের মৃত্যু: গ্রেফতার ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২০, ০২:৫১ পিএম

গ্রেফতারকৃত আসামিরা: ছবি: সংগৃহীত

গ্রেফতারকৃত আসামিরা: ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। 

এ ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনার পর তার মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলছে পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় হাসপাতালের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এ কথা জানান।

তিনি জানান, এএসপি শিপনকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। এই ঘটনার সাথে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, ব্যবস্থাপনার জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কথিত ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম ও শেফ মো. মাসুদ।

হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তারা অবৈধভাবে মানসিক রোগীর চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে আসছিল। হাসপাতালটিতে কয়েকজন রোগী আছেন। তারা চলে গেলে হাসপাতালটি বন্ধ করে করে দেয়া হবে।

পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা হত্যায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

মারধরের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, চিকিৎসার নামে ওই মানসিক হাসপাতালে এএসপি আনিসকে মারধর করা হয় ও মারধরের সময় জড়িতরা কেউই ওই হাসপাতালের চিকিৎসক নন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, শিপন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গতকাল সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধাস্তধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে আজ সকালে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।

পুলিশ জানায়, ভর্তি করানোর কয়েক মিনিট পরই তাকে অচেতন অবস্থায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখান থেকে তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মৃত আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক।

হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার উদ্ধার করা ফুটেজে দেখা গেছে, আনিসুলকে সাতজন ধরে টেনে-হেচড়ে একটি কক্ষে ঢুকাচ্ছে। এরপর তাকে ফেলে তিনজন তার পিঠের উপরে, দুইজন পায়ের ওপরে ও দুইজন হাত ধরে বেঁধে ফেলে। দুইজন কুনুই দিয়ে তার পিঠ ও ঘাড়ে আঘাত করছে। মারধরের কয়েক সেকেন্ড পর অচেতন হয়ে পরে আনিসুল। তারপর তার মুখে পানি ছেটানো হয়, এই সময় মেঝেতে পানি দিয়ে কিছু একটা মুছতেও দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর অ্যাপ্রন পরা দুই নারীকে তার বুকে পাঞ্চ করতে দেখা যায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh