ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০৯ এএম

ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ (বৃহস্পতিবার)। এই দিনটি ভোলাসহ উপকূলবাসীর জন্য বিভিষীকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। ১৯৭০ সালের এই দিনে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণিঝড় ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় উপকূলীয় জনপদ। 

মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়  চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনাসহ উপকূলীয় ১৮টি জেলা। ওই ঝড় জলোচ্ছাসে ১০ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। নিখোঁজ হয় কয়েক সহস্রাধিক। 

দিনটি স্মরেণে আলোচনা সভা, সেমিনার, কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।

উপমহাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহাণী ও ক্ষয়ক্ষতি হায়েছিল। প্রলয়ংকরী ওই ঝড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ভোলা জেলায় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আর অসংখ্য জনপদ বিরাণ ভূমিতে রূপ নেয়। উত্তাল মেঘনা নদী আর তার শাখা-প্রশাখাগুলো রূপান্তরিত হয়েছিল লাশের ভাগাড়ে। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। ঝড়ের আঘাতে লন্ড-ভন্ড হয়েছিলো পুরো ভোলাসহ উপকূল অঞ্চল।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দিনভর ছিল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস। সন্ধ্যার পর মুহূর্তের মধ্যেই প্রকৃতি এক ভয়ানক রূপ নেয়। রাতভর  ঝড় ও জলোচ্ছাসের তাণ্ডবে উপকূলীয় ১৮টি জেলা মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়। ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, গবাদি পশু, মাঠের ফসল নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়। এসবের সাথে ভেসে যায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ লাখ লাখ মানুষ।  

সে সময় তথ্যপ্রযুক্তি দুর্বল থাকায় উপকূলে অনেক মানুষই ঝড়ের পূর্বভাস পায়নি। যার কারণে বাড়ি-ঘর ছাড়েনি মানুষ। জলোচ্ছাস হয়েছিল গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৪ ফুট উচ্চতায়। কেউ গাছের ডালে, কেউ উঁচু ছাদে আশ্রয় নিয়ে কোনোমতে প্রাণে রক্ষা পেলেও ১০ দিন পর্যন্ত তাদের অভুক্ত কাটাতে হয়েছে। হতদরিদ্রদের একমাত্র আয়ের উৎস্য গবাদিপশুগুলোও ভাসিয়ে নিয়ে যায় জলোচ্ছাসে। বেড়িবাঁধ, জলাভূমি, জঙ্গলসহ বিভিন্ন প্রান্তে স্বজনহারা মানুষগুলো তাদের প্রিয়জনের লাশও খুঁজে পায়নি। আর তাই বছর ঘুরে ফিরে আসা দিনটি আজও কাঁদায় উপকূলবাসীকে।  

তৎকালীন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি ও ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যার পরে দেখেছি সাপ আর মানুষ দৌলতখানের চৌকিঘাটে জড়িয়ে পড়ে আছে। মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে মেঘনার পাড়ে মৃত অবস্থায়। সোনাপুরের একটি বাগানে গাছের ডালে এক মহিলার লাশ ঝুলছে। এমনিভাবে মনপুরা, চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমুদ্দিন ও দৌলতখানসহ সমগ্র জেলায় মানুষ আর গবাদি পশু সেদিন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলে ভেসে গেছে। জন-মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছিলো দ্বীপজেলা ভোলা।

তিনি বলেন, ঝড়ের আঘাতে টিএন্ডটি ভবনসহ সকল স্থাপনা ভেঙ্গে যায়। নিউজ পাঠানোর কোন মাধ্যম ছিল না। ঘটনার তিনদিন পরে তিনি তৎকালীন বরিশাল জেলা প্রশাসক হাসেম আলীর অনুমতি নিয়ে ভোলা থানার ওয়ারলেসযোগে পূর্বদেশ পত্রিকায় ‘বাংলার মানুষ কাদোঁ, গাছে গাছে ঝুলছে লাশ’ শিরোনামে সংবাদ পাঠান। এছাড়া একটি ট্রলারে করে ছবি পাঠান পত্রিকা অফিসে। ঘটনার চারদিন পরে পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলে পুরো দেশে এ নিয়ে আলোড়িত হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রাণ আসতে শুরু করে।

হাবিবুর রহমান আরো বলেন, ১৮ অথবা ১৯ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করে এক জাহাজ ত্রাণ নিয়ে আসেন ভোলায়। সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মনপুরায়। মনপুরার ২৬ হাজার মানুষের মধ্যে ১৭ হাজারই সেদিন সাগরের পানিতে ভেসে গিয়েছিলো।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh