সাকিব ক্ষমা চাওয়ায় লজ্জিত তসলিমা নাসরিন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২০, ১১:০১ পিএম

ভক্তের মোবাইল ছুঁড়ে ফেলা ও পশ্চিমবঙ্গের পূজামণ্ডপ ইস্যুতে সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে এসে ক্ষমা চেয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি বিতর্কিত লেখক তসলিমা নাসরিন।

তসলিমা নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, সাকিবের ক্ষমা চাওয়ার ভিডিওটি দেখে লজ্জা পেলাম। আমার বিরুদ্ধে নব্বই সাল থেকে টানা তিন বছর  মৌলবাদী আন্দোলন চলেছিল,  আমাকে হত্যা করার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছিল লাখো মৌলবাদী, নির্বিঘ্নে আমার মাথার মূল্য ঘোষণা করেছিল জিহাদি নেতারা। কই আমি তো একবারও ভাবিনি আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে! সরকার আমার বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল, আমাকে দুইমাস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্তরীণ থাকতে হয়েছিল, কই একবারও তো মনে হয়নি ক্ষমা চেয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে আমাকে? আমার শুধু মনে হয়েছিল, আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। ক্ষমা যদি কারো চাইতেই হয়, ওদের চাইতে হবে আমার কাছে।  

সাকিব আল হাসান বিখ্যাত লোক। নিরাপত্তারক্ষী দ্বারা বেষ্টিত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশের মানুষ  তাঁকে ভালোবাসে। এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ভালোবাসেন। একটা গ্রামের লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় থ্রেট করলো তো উনি একেবারে ‘আমি গর্বিত মুসলমান, আমি পূজা মণ্ডপ উদ্বোধন করিনি, পূজার জন্য আমি কলকাতা যাইনি, অন্য একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, পথে এক মিনিটের জন্য মণ্ডপে অনেকের অনুরোধে শুধু গিয়েছি, আর যাবো না। সবার ওপরে ইসলাম ধর্ম তাহার ওপরে নাই ‘--- এসব বলার কোনো দরকার ছিল না। লোকে বলে নিজের ‘কল্লা’ বাঁচাবার জন্য বলেছেন,  ওঁর দোষ নেই। না, আমি মনে করি না, তাঁর কল্লা নিয়ে সত্যিই কোনো সমস্যা হতো। তিনি তো আর অভিজিৎ রায় নন, নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া রাস্তায় একা হাঁটেন। তিনি তো হজ করে আসা সাচ্চা মুসলমান, তিনি তো অভিজিতের মতো ইসলামের সমালোচনা করেননি কোনোদিন। কী ভয়ে তিনি মাথা নোয়ালেন? কেউ যদি এখন রামদা নাচিয়ে বলে তুই আর কোনোদিন ক্রিকেট খেলবি তো তোকে কুপিয়ে মেরে ফেলবো, সাকিব কি খেলা ছেড়ে দেবেন? এতদিন খেলেছেন বলে অনুতপ্ত হবেন? ইসলামে তো গানবাজনা, নাচা, ছবি আঁকা- সবই নিষিদ্ধ, খেলা নিষিদ্ধ হতে কতক্ষণ! মেয়েদের খেলা তো নিষিদ্ধ। 

বাংলাদেশের পূজা মণ্ডপে মুসলমানরা যায়। প্রধানমন্ত্রীও যান। এতো কোনোদিন হারাম ছিল না। কবে থেকে এটি নিষিদ্ধ হলো বাংলাদেশে? নাকি ওই রামদাওয়ালা জিহাদিটি মুসলমানদের  পূজামণ্ডপে যাওয়া পছন্দ করে না বলে কোনো মুসলমানের পূজামণ্ডপে যাওয়া চলবে না? কী হতো যদি সাকিব বলতেন ‘পূজা উদ্বোধন করেছি, সম্মানিত বোধ করেছি। হিন্দুরা কী সহজে বিধর্মীদের পূজায় আমন্ত্রণ জানান, তাদের দিয়ে তাঁদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মানুষ্ঠান উদ্বোধন করান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এটি চমৎকার উদাহরণ, আমাদেরও শিখতে হবে ওঁদের কাছ থেকে, আমাদেরও ইসলামি পরবে অনুষ্ঠানে বিধর্মীদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। ঈদের অনুষ্ঠানাদি বিধর্মীদের দিয়ে উদ্বোধন করাতে হবে। উদারনৈতিক ইসলামকে গ্রহণ এবং হিংসের আর ঘৃণার ইসলামকে বর্জন করাটা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।‘

যদি বলতেন তাহলে নিঃসন্দেহে একটা ভালো কাজ করতেন সমাজের জন্য। কিন্তু তিনি এখন তাঁর কোটি ভক্তকে বলে দিলেন এক/দুই মিনিটের জন্য  পূজামণ্ডপে যাওয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত। তিনি ভুল করেছেন ওই মণ্ডপে গিয়ে। এর মানে মুসলমানের পূজামণ্ডপে যাওয়া ঠিক নয়। তিনি ধর্মান্ধ জিহাদি অপশক্তিকে লক্ষগুণ শক্তি দিলেন। এখন কোনো মুসলমান পূজামণ্ডপে গেলে রক্ষে নেই, কোনো মুসলমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বললে রক্ষে নেই। কোনো মুসলমান হিন্দুর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলে রক্ষে নেই। 

জিহাদির হুমকি, সাকিবের ক্ষমা চাওয়া– এসবই প্রমাণ করলো দেশটাকে জিয়া, এরশাদ, খালেদা আর হাসিনা মিলে ভয়ংকর এক ‘দারুল ইসলাম‘ বানিয়ে ফেলেছেন, যে দেশ জিহাদি এবং জিহাদি সমর্থক ছাড়া আর কারো বসবাসের যোগ্য নয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh