লাশকাটা ঘরে মৃত নারীদের সাথে যৌনাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২০, ০৩:৩৪ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২০, ০৩:৩৮ পিএম

লাশকাটা ঘরে স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরীক্ষা-নীক্ষার মাধ্যমে তাদের মৃত্যুরহস্য উন্মোচন করা হয়। আর লাশকাটা ঘরে ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসকদের সহকারীরা ডোম নামে পরিচিত। কিন্তু সেই লাশকাটা ঘরেই একের পর এক মৃত নারীদের দেহের সাথে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতেন এক ডোম।

মুন্না ভগত, গত এক বছরে অন্তত ছয়জন মৃত নারীর সাতে যৌনাচার করেছে। ছয় নারীর এইচভিএসে (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) মুন্নার শুক্রাণু পাওয়া গেছে। লাশগুলো আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত ছিলো। ১২ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে তুলনামূলক ভালো লাশ এলেই মুন্না চৌনাচার করতো বলে সিআইডি জানিয়েছে।

সিআইডি বলছে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের ডোম সহকারী হিসেবে প্রায় ৪ বছর ধরে কাজ করছে মুন্না। শুরু থেকে মর্গেই থাকে সে। ময়নাতদন্তের আগে লাশ রাতে পাহারা দেয়ার সময় এই কাজে লিপ্ত হতো সে। সিআইডি কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না তার এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে।

২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম ডিএনএ ল্যাব স্থাপিত হয়। ল্যাব স্থাপনের পর হতে ধর্ষণ ও হত্যাসহ আদালতের নির্দেশে প্রেরিত সব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে সিআইডি। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ কয়েকটি নমুনা পাঠিয়েছিল সিআইডিকে। সেখানে মৃত নারীর এইচভিএসে পুরুষ বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করার চেষ্টা করে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোডিস (CODIS)  সফটওয়ার আমরা সার্চ দিয়ে দেখি। মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনায় প্রাপ্ত ডিএনএর প্রোফাইলের সঙ্গে একই ব্যক্তির ডিএনএ বারবার ম্যাচ করছে। যেটা অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিলো। ধারণা করা হয়, একজন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা অথবা ধর্ষণজনিত কারণে আত্মহত্যা হয়েছে। কিন্তু মরদেহগুলোতে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলো না।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তখন মনে করি, কোনো না কোনোভাবে ভিকটিমদের মৃতদেহের ওপরে কোনো ব্যক্তির বিকৃত যৌন লালসা চরিতার্থ হয়েছে। প্রতিটি মৃতদেহ মর্গে আনার পর তার মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়। সব লাশই ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রেখে দেয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন ডোম নিয়মিত পাহারা দিতো। কিন্তু এই লাশগুলোর ক্ষেত্রে একজন ডোমসহকারী নিয়মিত ডিউটিতে থাকতো। প্রাথমিকভাবে তাকে সন্দেহ হয় আমাদের। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাহিরে নিয়ে গিয়ে কথা বলার নামে, চা খাওয়ার ছলে তার ডিএনএ সংগ্রহ করি আমরা। সেটা সিআইডি ল্যাবে নিয়ে এসে বিশ্লেষণ করলে ওই ছয় মরদেহের ডিএনএর সঙ্গে ম্যাচ করে। তখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেফতারের অভিযান চালায়। বিষয়টি আসামি বুঝতে পেরে গা-ঢাকা দেয়।’

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সিআইডি সদরদফতর থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ছয় মৃত নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের ডোম সহকারী মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুন্নার ডিএনএ প্রোফাইল মিলে যাওয়ায় মৃতদেহের ওপর সে যে বিকৃত যৌনাচারের করেছে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সিআইডি জানায়, আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh