ফ্রান্সের মুসলিমদের ‘প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধ’ মেনে চলতে আল্টিমেটাম ম্যাক্রোঁর

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২০, ১১:০৫ এএম

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

ফ্রান্সের ‘চার্টার অব রিপাবলিকান ভ্যালুস’ বা ‘প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সনদ’ মেনে নেয়ার জন্য দেশটির মুসলিম নেতাদের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট গত বুধবার ফ্রান্সের মুসলিম নেতাদের শীর্ষ সংগঠন ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব দ্য মুসলিম ফেইথকে (সিএফসিএম) ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন এই সনদ মেনে নেয়ার জন্য।

সিএফসিএম ইমামদের নিয়োগ ও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমাম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। এটি ইমামদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার ও তাদের অনুমতিপত্র বাতিল করতে পারবে।

ম্যাক্রোঁ সরকারের বক্তব্য, চরমপন্থী ইসলাম প্রতিহত করার জন্যই এই ব্যবস্থাগুলো করা হচ্ছে। চার্টারে স্পষ্ট করে বলা আছে, ইসলাম একটি ধর্ম, কিন্তু তা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়। কেউ যদি তা করার চেষ্টা করেন, তা হলে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। 

আরো একটি কথা উল্লেখ করা হয়েছে চার্টারে- বিদেশের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আরব বিশ্ব থেকে ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে সাহায্য পায়, তার উপর কড়াকড়ি জারি করার জন্যই চার্টারে এই পয়েন্টটি লেখা আছে।

এক মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে কট্টর ইসলামপন্থীরা তিনটি হামলা চালানোর পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানালো ফ্রান্স। হামলাগুলোর মুখে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ফরাসি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন। এসব হামলার মধ্যে ছিল একজন শিক্ষকের শিরশ্ছেদের ঘটনা, যিনি তার ক্লাসে আলোচনার সময় ইসলামের নবীর কার্টুন দেখিয়েছিলেন।

গত বুধবার এলিসি প্যালেসে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন আটজন সিএফসিএম নেতার সাথে বৈঠক করেন।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে লা প্যারিসিয়েঁ পত্রিকা একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায় যে, সনদে দুইটি মূলনীতি পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে- রাজনৈতিক ইসলাম প্রত্যাখ্যান এবং যেকোনো ধরণের বিদেশি হস্তক্ষেপ।

ওই বৈঠকে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমামস প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট যাকে ‘ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, সেই বিষয়টি প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে নতুন পদক্ষেপ নেয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে থাকছে একটি আইন প্রণয়ন, যার লক্ষ্য হবে মৌলবাদকে প্রতিহত করা।

এই নতুন কৌশলের মধ্যে রয়েছে:

১. হোমস্কুলিং বা ঘরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ধর্মীয় কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেয়া বা ভয় দেখানো হলে আরো কঠিন শাস্তির বিধান।

২. নতুন আইনের অধীনে শিশুদের একটি পরিচিতি বা আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রদান করা, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে তারা স্কুলে যাচ্ছে কি-না। যেসব অভিভাবক এই আইন অমান্য করবে, তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা-সহ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হতে পারে।

৩. কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য, যার মাধ্যমে তার ক্ষতি করা সম্ভব হতে পারে, সেই ধরণের তথ্য শেয়ার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দারমানিন লা ফিগারো পত্রিকাকে বলেন, আমাদের শিশুদের ইসলামিস্টদের থাবা থেকে বাঁচাতে হবে।

প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নিয়ে ৯ ডিসেম্বর ফরাসী মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে।

এ বছরের শুরুর দিকে ম্যাক্রোঁ ইসলামকে ‘সঙ্কটাপন্ন’ ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেন ও ম্যাগাজিনগুলোর ইসলামের নবীকে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

ওই মন্তব্যগুলো করার পর থেকেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট মুসলিম প্রধান অনেক দেশে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। অনেক জায়গাতেই বিক্ষোভকারীরা ফরাসী পণ্য বয়কট করার ডাক দেন। ফ্রান্সে জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি। স্কুলসহ অন্যান্য জনসমাগমস্থলে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি এরই একটি অংশ। একে ক্ষুন্ন করে কোনো একটি ধর্মীয় অনুভূতিকে সুরক্ষার চেষ্টা করাকে ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী হিসেবে মনে করা হয়।

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মুসলিম বাস করে ফ্রান্সে। -বিবিসি ও ডয়চে ভেলে

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh