বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে পুরো দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০১:৪৭ পিএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০৪:৩৬ পিএম

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক, উন্নত ও বহুমূখি করতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে পুরো দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ রবিবার (২৯ নভেম্বর) গণভবন থেকে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় রেলসহ সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি জানান, এতে ত্বরান্বিত হবে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন। এ রেল সেতু দেশের আভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হতেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, যমুনা নদীর ওপর নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ডেডিকেটেড রেল সেতু। ৪.৮ কিলোমিটার এ সেতুর ফলে, বাড়বে রেলের গতি, কমবে পরিচালন ব্যায়। যা চালু হবে ২০২৪ সালের আগস্টে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আলাদাভাবে আরেকটি সেতু নির্মাণ, এটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে ব্যাবসা বাণিজ্য বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে, মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। আমাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ সময় তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্বের মধ্যে সেতুবন্ধ করতে গেলে আমাদের ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে সেতু সংযোগ করতে হবে। ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে—এই দুটি সেতু যদি আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়বে।”

প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ সুবিধা সবচেয়ে বড় বিষয়। এর আগে উত্তরবঙ্গে মঙ্গা লেগে থাকতো। আওয়ামী লীগ থেকে তখন আমরা সহযোগিতার জন্য যেতাম। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়াগায় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। যোগাযোগ হলে মানুষের অর্থনীতি সচল হয়।’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণের ফলে মানুষের অনেক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। টাঙ্গাইলে কোনো রেললাইন ছিলো না। আমরাই প্রথম টাঙ্গাইলে রেল লাইন দেই। রেল পণ্য পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা এরই মধ্যে সেতুর প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। মূল সেতু দুটি প্যাকেজের অধীনে নির্মিত হবে। পূর্ব ও পশ্চিম অংশের নকশা ও অবকাঠামো কাজের জন্য যথাক্রমে জাপানের ওবায়াশি-টোয়া জেএফই এবং আইএইচআই-এসএমসিসি জেভির সঙ্গে পৃথক দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে উভয় ঠিকাদারের কাছে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। নতুন সেতুর ওপর দিয়ে ব্রডগেজ লাইনে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ লাইনটিতে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে রেল চলতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মিত হলে ৮৮টি রেল চলাচল করতে সক্ষম হবে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

ঠিকাদারদের স্থানীয় কর্মীরা এখন নির্মাণের জায়গাটি প্রস্তুত করছে, সাইটটিকে বেড়া দিচ্ছেন এবং শ্রমিকদের আবাসন সুবিধা তৈরি করছেন। ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ এরই মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। নয় হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকার অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এবং দুই হাজার ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে আসবে।

২০১৪ সালের ২৫ থেকে ২৮ মে টোকিও সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের সঙ্গে সাক্ষাতকালে জাপানকে এই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য অনুরোধ করেছিলেন।পরে, ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ঢাকা সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি উত্থাপন করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh