সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৩৬ এএম
ছবি: খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
বাংলা ঋতুতে এখন হেমন্তকাল হলেও পাহাড়ে রীতিমতো শীতে অনুভব হচ্ছে। তবে প্রকৃতিতে এখনো হেমন্তের আমেজ। পাহাড়ি পল্লীতে নতুন ধানের সুবাস। হেমন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে ব্যতিক্রমী আয়োজন হয়েছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায়।
মাটিরাঙা বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ওয়াচু ১নং রাবার বাগান। এখানে মূলত মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসতি । নবান্ন বাঙালির উৎসব হলেও এখানকার স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দারা মিলে উদযাপন করল অন্যরকম ‘নবান্ন উৎসব’। গতানুগতিক নবান্ন থেকে এটা ছিল ভিন্ন রঙ,ভিন্ন আমেজে।
গতকাল শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে স্থানীয় শিশুদের জন্য গড়ে উঠা ‘পাঠশালা বিন্দু থেকে’ এর আয়োজনে দিনভর ছিল পিঠা উৎসব, গ্রামীণ খেলাধুলা, স্থানীয় শিল্পীদের নাচ ও গান, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সন্ধ্যায় ছিল ফানুস উড়ানো। ভিন্নধর্মী এই আয়োজনে দুই শতাধিক মানুষ যোগ দেয়।
হেমন্তের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে পাড়ার রাবার বাগানে শুরু হয় পিঠা বানানোর কাজ, চলে প্রায় দুপুর পর্যন্ত। গ্রামের মারমা নারীরা ছেছমা পিঠা, ভাপা পিঠা, কলাপিঠা, বাঁশ পিঠা, সাইন্যা পিঠা ও শামুকপিঠাসহ অন্তত ১০ ধরনের পিঠা বানায়। গ্রামের নারীদের বানানো পিঠা উৎসবে আগত অতিথিদের মাঝে বিতরণ করা হয়। উৎসব প্রাঙ্গণের একপাশে চলছে পিঠা বানানোর ধুম অন্যদিকে সেসব পিঠা খাওয়ার প্রতিযোগিতা। পিঠা উৎসবে একসাথে হরেক রকমের গরম গরম পিঠার স্বাদ নিতে পেরেছে উৎসবে আগতরা।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ‘পাঠশালা বিন্দু থেকে’ এর শুভানুধ্যায়ীরা বর্ণিল এই নবান্ন উৎসেব যোগ দিতে আসে। এমন আয়োজনে মুগ্ধ তারাও।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের পাঠশালার পক্ষ থেকে এমন আয়োজন বারবার হওয়া উচিত। আজকে পুরো গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়েছে। আমরা ৮-১০ রকমের পিঠা বানিয়েছি। সবাই মিলে পিঠা বানানোয় অন্যরকম আনন্দ আছে। সবাই মিলে সারাদিন মজা করেছি।
নবান্ন উৎসবে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সবুর্ণা মজুমদার। তিনি বলেন, পাঠশালার উদ্যোগে নবান্ন উৎসবে পুরো পাড়ার মানুষ এখানে অংশ নিয়েছে। এখানে উৎসবে যোগ দিতে বাইরে থেকেও অনেকে এসেছে। উৎসব একাবারেই আদিম, কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। সাধারণ পাহাড়ি পল্লীর মানুষেরা এখানে সমাবেত হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ‘পাঠশালা বিন্দু থেকে’ এর শুভানুধ্যায়ী ডা.সুশান্ত বড়ুয়া জানান, এটি অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকা। এখানকার স্থানীয় মানুষের এমন আয়োজন সত্যিই মুগ্ধকর। গ্রামের সব মানুষেরা মিলে এখানে একসাথে পিঠা বানিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে মানুষের মাঝে মেলবন্ধন তৈরি হবে।
পিঠা উৎসবের পাশাপাশি কোমড় তাঁত বুনে স্থানীয় মারমা জনগোষ্ঠী। বিকেলে ছিল বর্ণিল সাংস্কৃতিক উৎসব। রাতে উড়ানো হয় ফানুস বাতি।
নবান্ন উৎসবের আয়োজক ও ‘ পাঠশালা বিন্দু থেকে’ এর সমন্বয়ক জাহেদ আহমেদ টুটুল জানান, এটি আসলে অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল। এখানে শিক্ষার আলো পৌছেনি। এখানে শিশুদের জন্য বিকল্প পাঠশালা গড়ে তোলা হয়েছে। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে এখানে পাঠশালার আয়োজনে নবান্ন উৎসব করা হয়। স্থানীয় গ্রামবাসী সমন্বিতভাবে এই আয়োজন করেছে। সবাইকে বিনামূল্যে পিঠা খাওয়ানো হয়। প্রতিবছরই এমন আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে।