এবার নতুন পাঠ্যবই স্কুল বন্ধ রেখেই বিতরণ করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:১৩ পিএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার স্কুল বন্ধ রেখেই শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিত করে নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল থেকে বই নিতে হবে। 

এছাড়া একেক দিন একেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে প্যাকেটজাত বই তুলে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।

এদিকে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পয়লা জানুয়ারি বই উৎসব না হলেও বছরের শুরুতেই সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী বিনামূল্যে বই পাবে। এজন্য ছাপা হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা একথা জানান।

পাঠ্যবই বিতরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার ক্লাস ও রোল অনুযায়ী নতুন বই প্যাকেটজাত করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভিন্ন ভিন্ন দিনে ক্লাস ও রোল অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে শিডিউল দেয়া থাকবে। নির্ধারিত দিনে শিডিউলভুক্ত ক্লাসের শিক্ষার্থীরা বই সংগ্রহ করতে পারবে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার স্কুল থেকেই নতুন বই বিতরণ করা হবে। মাঠপর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে এ নির্দেশনা পৌঁছে দেবেন। স্কুলে একেক ক্লাসের বই একেক দিন বিতরণ করা হবে। স্কুলে আগে থেকেই বই প্যাকেট করা থাকবে। শিক্ষার্থীরা শুধু সংগ্রহ করবে।

তিনি বলেন, কোন দিন কোন ক্লাসের বই দেয়া হবে তা আগে থেকেই স্কুলের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেয়া হবে। আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকায় কবে থেকে বিতরণ শুরু হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে যেসব স্কুলে এক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি এসব ক্ষেত্রে সকাল ও বিকাল আলাদা করে অভিভাবকদের বই নিয়ে যেতে বলা হবে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র গতকাল রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) জানিয়েছে, প্রতিবছর গণভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এবার ৩১ ডিসেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বই বিতরণ কভিডের কারণে ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

তিনি বলেন, এবার প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপা হচ্ছে। মুদ্রণের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী বিনামূল্যে এই বই পাবে। এদিনই স্বাস্থবিধি মেনে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মন্ত্রী ও সচিবদের উপস্থিতিতে কয়েকজন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়ে বই বিতরণের উদ্বোধন করবেন তিনি। পরের দিন ১ জানুয়ারি সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের নতুন বই বিতরণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার বইয়ের প্রচ্ছদে নতুনত্ব আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের পিছনের (ব্যাক পেজ) মলাটে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ক্যাপশনসহ সংযোজন করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী বছরে সর্বমোট পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি। এর মধ্যে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ২ কোটি ৫৯ লাখ ৯২ হাজার ৬৭১ টি বই, তৃতীয়-চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য ৬ কোটি ৯৬ লাখ, ৯৭ হাজার ৩৭৪ টি। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ২৭৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রী ) শিশুদের জন্য পাঁচটি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ২৮৮ টি বিশেষ ভাষায় বই বিতরণ করা হবে। তবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাদের ভাষায় শুধুমাত্র বাংলা বইটি পাবে। এবছর সাঁওতাল ভাষায় পাঠ্যপুস্তক দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবার ৯ হাজার ১৯৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার কপি বই মুদ্রণ করার কাজ চলমান রয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh