এন আই বুলবুল
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২১, ১০:০৯ এএম
২০২০ সালের বিদায়ের আগেই শুরু হয় হিসাব-নিকাষ। কিন্তু হিসাব-নিকাষের পাল্লা বরাবরই অন্যরকম। করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বেশ অস্থির সময় শুরু হয়। সব কিছুর মতো বন্ধ হয়ে যায় দেশ-বিদেশের কনসার্ট। নতুন গান প্রকাশ।
লকডাউনে অনেক মিউজিশিয়ান এবার পেশা বদলাতেও বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ এখন সংগীত ছেড়ে বিকল্প পেশাতেই মনোযোগী। নতুন স্বাভাবিক জীবনে এখনো অনেকেই স্বাভাবিক হতে পারছেন না বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন। আর কতদিন এভাবে পার করতে হবে সেটিও কেউ নিশ্চিত নন।
এই বছরে হারাতে হয়েছে দেশীয় সংগীতের তিনজন কিংবদন্তিকে। গেল ১৬ মে না ফেরার দেশে চলে যান গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আজাদ রহমান। ৬ জুলাই মারা যান আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। বরেণ্য সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গীতিকার আলাউদ্দিন আলী ৯ আগস্ট চলে যান এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।
আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন দেশের শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতার কর্ণধার সেলিম খানও। ১০ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। সংগীতের মানুষ এই বছরকে অভিশপ্ত মনে করেন। সংগীতের অনেক গুনীজনকে হারিয়ে এই অঙ্গনটি অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
গেল বছরের তুলনায় এই বছরে গান প্রকাশও ছিল অনেক কম। বছরের প্রথমদিকে কিছু গান প্রকাশ হয়। এরপরেই টানা তিন মাস বন্ধ ছিল। সংগীতের এই খরা শুধু দেশেই নয়। পাশ্ববর্তী দেশেও করোনায় স্থবির ছিল মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি। বেশ কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয় সেই রাণু মন্ডলকেও করোনায় আবারো রেলস্টেশনে নামতে হয়েছে। রানাঘাট স্টেশন থেকে শুরু হয়েছিল তার যাত্রা। লতার গান গেয়ে আজ রীতিমতো তারকার সম্মান পেয়েছেন রানু।
এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন কিংবদন্তি গায়ক এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম। চেন্নাইয়ের হাসপাতালে প্রায় ২ মাস ধরে চিকিৎসা চলার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ৫৫ বছরের সংগীতের ক্যারিয়ারে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন এসপি বালাসুব্রহ্মন্যম। করোনা থেকে বাদ পড়েনি বলিউডও।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন মার্কিন লোকগানের শিল্পী জো ডিফি। গ্রামি অ্যাওয়ার্ডজয়ী এই শিল্পী ৯০-এর দশকেই সাড়া জাগিয়েছিলেন গান গেয়ে। মাত্র ৬১ বছর বয়সে করোনা থামিয়ে দিল তার পথচলা। গেল ২৯ মার্চ তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ হয়।
সংগীতবোদ্ধাদের মতে, গেল কয়েক দশকে সংগীতে এমন খারাপ সময় আসেনি। সংগীতের মানুষকে পেশা বদলাতে হবে এমনটাও কারও ভাবনায় ছিল না। অথচ করোনায় সেটি করতে বাধ্য হয়েছে সংগীতের মানুষদের। সারাবিশ্বের শিল্পীদের আয় কনসার্টের ওপর নির্ভর করে। নতুন বছরেও সেটি কতটা চালু হবে তারও ঠিক নেই। এরই মধ্যে শীতে সারাবিশ্বে করোনার প্রভাব আবারো বাড়তে শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি দেশে লকডাউনও দেয়া হয়েছে নতুন করে।