নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২১, ০১:৩১ পিএম
অনিয়ম দুর্নীতিতে এমপি-নেতাকর্মীদের জড়িয়ে যাওয়া নিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার দেয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, এমপিরা পালানোর পথ পাবেন না- এ বক্তব্য নিয়ে দুই দিন গোটা নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোতেও চলছে তোলপাড়।
আওয়ামী লীগ থেকে তৃতীয় বারের মতো নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মনোনয়ন পেয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। আগামী ১৬ই জানুয়ারি হবে, এই ভোট। যাতে গত ৩১ ডিসেম্বর নিজের ইশতেহার দেন আবদুল কাদের মির্জা। ওইদিন দলের বিভিন্ন সভায় নেতাকর্মীদের মাঝে দেয়া বক্তব্যই এখন তুমুল আলোচনায়।
বসুরহাট পৌরসভার বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ফেনীর এমপি নিজাম হাজারী ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে গুলি করে গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, কিন্তু তার পরিবার এখনও বিচার পায়নি। আমাকে হত্যা করার জন্য ফেনী থেকে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি রাহাতের মাধ্যমে অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছে কোম্পানীগঞ্জে- সেই নিজাম হাজারী এখন নেতা।
তিনি বলেছেন, যারা সেতুমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে তারা নেতা, যারা গরিবের ছেলেদের স্কুল দপ্তরির চাকরি দিয়ে ৫ লাখ করে টাকা নিয়েছে তারা নেতা, যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিয়ে ৭-৮ লাখ টাকা করে নিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের নেতা, তারা দুর্দিনে কোথায় ছিল?
জেলা আওয়ামী লীগের গঠিত কমিটি প্রসঙ্গে আবদুল কাদের বলেন, জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের ছোটভাই জাবেদ সাহেব আমেরিকায় থাকেন; তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হাওয়া ভবনের মানিক আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জামায়াত-বিএনপি ঘরানা থেকে এনে দলের কমিটিতে জায়গা দিয়েছেন। এর প্রতিবাদ করে বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বাদশা স্ট্রোক করে মারা গেছেন। কেউ প্রতিবাদ করেনি।
তিনি বলেন, ফেনীর এমপি খুনি নিজাম হাজারী, জেলার এক এমপি, যুবরাজ তার এলাকায় নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করছে।
তিনি আরো বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি পুনর্গঠন, দুই জেলার দুই এমপিকে বহিষ্কার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বন্ধ করা, নিয়োগ বাণিজ্যে নেয়া গরিবের সন্তানদের থেকে কোটি কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। আর যদি তা না হয় তিনি তার সমর্থকদের নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবেন।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, মেধাবী নেতা ওবায়দুল কাদের অসুস্থ শরীর নিয়ে জেলার উন্নয়নে দিন-রাত কাজ করছেন। অথচ টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজরা তার নাম ভাঙিয়ে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে।
তিনি বলেন, আপনাদের কারণে ভোট কমছে। ভোটাররা ভোট থেকে বিমুখ হচ্ছেন। সোজা হয়ে যান, না হলে বৃহত্তর নোয়াখালীর ৪-৫টি আসন ছাড়া অন্যরা পালানোর পথ পাবেন না।
তিনি বলেন, ঢাকায় বসে এক নেতা নিজাম হাজারী ও এমপি একরামের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আমাকে হুমকি দেয়।
আবদুল কাদের বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা দিলেও এ ধরনের হাইব্রিড নেতাদের কারণে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারেননি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলব। দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলব। জাতীয় নেতা ওবায়দুল কাদেরের উন্নয়নের কথা বলব।
আবদুল কাদের মির্জার এ বক্তব্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। আর এ নিয়ে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে তোলপাড় এবং জেলা, শহর, বন্দর, গ্রামে একই বিষয় নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।