দুই হাজার বিশ: অর্ধশত সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার

রাবেয়া আশরাফী পিংকি

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:২৯ এএম

আফগানিস্তানে গুলিতে নিহত সাংবাদিক মালালাই মাইওয়ান্দের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গত ১০ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানে গুলিতে নিহত সাংবাদিক মালালাই মাইওয়ান্দের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গত ১০ ডিসেম্বর। ছবি: রয়টার্স

নতুন একটি বছরকে নানা আশাবাদ নিয়ে স্বাগত জানানো হয়। বিদায়ী ২০২০ সালও এর ব্যতিক্রম ছিল না; কিন্তু বছরজুড়ে পুরো বিশ্বকে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে নিরাশায় থাকতে হয়েছে। 

প্রতিটি জায়গা থেকে নেতিবাচক খবর এসেছে। এমনকি বিশ্বের এসব খবর আমরা যে মাধ্যমে পেয়ে আসছি, সেই মিডিয়াও দুঃসংবাদ থেকে পরিত্রাণ পায়নি। অন্যান্য বছরের মতো ২০২০ সালেও বহু সাংবাদিককে তাদের পেশাদারিত্বের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। 

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফরাসি সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে মোট ৫০ জন সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। 

ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত আরএসএফের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর যে দেশগুলোয় ৫০ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, এর মধ্যে বেশিরভাগ দেশেই কোনো যুদ্ধ ছিল না। বরং কাজ বা পেশাদারিত্ব রক্ষার জন্যই এই সাংবাদিকদের প্রাণ দিতে হয়েছে। যদিও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে খুন হওয়া সাংবাদিকের সংখ্যা কম। ২০১৯ সালে ৫৩ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। 

অবশ্য আরএসএফ বলছে, কভিড-১৯ মহামারির কারণে এ বছর খুব কমসংখ্যক সাংবাদিকই কর্মক্ষেত্রে ছিলেন। তবে পর্যবেক্ষক সংস্থাটি জানায়, সাংবাদিক খুনের সংখ্যা কিছুটা কম হওয়া এটিই নির্দেশ করছে যে, সংঘবদ্ধ অপরাধ, দুর্নীতি অথবা পরিবেশ ইস্যু নিয়ে অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকরা আরো বেশি নিশানায় পরিণত হচ্ছেন। ২০২০ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে ৮৪ শতাংশই তাদের কাজের জন্য টার্গেট কিলিংয়ে পরিণত হন। গত বছর এই হার ছিল ৬৩ শতাংশ। 

আরএসএফের প্রধান সম্পাদক পাউলিন আদেস-মেভেল বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস দেখে আসছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা রাষ্ট্রে সবসময়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।’ মেক্সিকোতে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন; এরপরই রয়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান। প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ‘মাদক পাচারকারী ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে এখনো যোগসূত্র রয়েছে ও তাদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা অকুতোভয় সাংবাদিকরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে আসছেন। 

মেক্সিকোতে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের জন্য এখন পর্যন্ত কাউকেই শাস্তি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে আরএসএফ। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানারকম নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে পাঁচজন সাংবাদিককে হত্যাকে করা হয়েছে। তালেবান ও সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনা অব্যাহত সত্ত্বেও সম্প্রতি দেশটিতে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। 

ইরানেও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা বেড়েছে। যেমন- দেশটির বিরোধী দলীয় ব্যক্তিত্ব রুহুল্লাহ জামকে চলতি মাসেই শিরশ্ছেদ করা হয়। রুহুল্লাহ একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ চ্যানেল পরিচালনা করতেন, যেখানে সব সরকার বিরোধীরা এক জোট হতেন। আরএসএফ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড ‘নিশ্চিত করেছে সাংবাদিক হত্যার দিক থেকে ইরান রেকর্ড করেছে।’ 

আরএসএফের আদেস-মেভেল জানিয়েছেন, ইদানীং আন্দোলন-বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহকারী সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার একটি ‘নতুন’ ধারা দেখা যাচ্ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ নয়, ফ্রান্সে বিতর্কিত নতুন নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময়ও এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে। 

প্রতিবেদনটির প্রথম ধাপে আরএসএফ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ‘মিডিয়ার স্বাধীনতা লঙ্ঘন ব্যাপকহারে বৃদ্ধিতে’ ভূমিকা রেখেছে, আর তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। কারাবন্দি ৩৮৭ সাংবাদিকের একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে আরএসএফ। ‘ঐতিহাসিকভাবে এটি অনেক বড় সংখ্যা’ বলেও উল্লেখ করেছে আরএসএফ। কারাবন্দি থাকা ১৪ সাংবাদিককে করোনাভাইরাস সংকট নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য গ্রেফতার করা হয়। 

এমনকি কয়েক দিন আগেও চীনা সাংবাদিক ঝাং ঝানকে ‘ঝগড়ায় ইন্ধন ও ঝামেলা সৃষ্টির’ অভিযোগে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় দেশটির সরকার। উল্লেখ্য করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে মহামারির প্রাথমিক কিন্তু চরম সময়ে সেখান থেকে খবর পাঠাতেন ঝাং। মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত আটজন তথ্য ফাঁসকারীকে শাস্তি দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বিশ্বব্যাপী শতশত সাংবাদিক কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শুধু তা-ই নয়, দায়িত্ব পালনকালে কতজন সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তার সঠিক কোনো সংখ্যা জানা যায়নি বলে আরএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh