স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাবিবুরের সবুজ কৃষি খামার

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ১২:১৭ পিএম

হাবিবুর রহমান। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

হাবিবুর রহমান। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সড়কের উত্তর-পূর্ব পাশের এক খণ্ড সবুজ শাকসবজির সমারোহ নজর কাড়ছে পথচারীদের। প্রায় ২ একর জায়গা জুড়ে শীতকালীন মৌসুমি সবজি টমেটো, লতা বেগুন, কাঁচা মরিচ, লাউ ও কুমড়ার চাষ করা হয়েছে সেখানে। 

টমেটো গাছের শাখায় শাখায় দুলছে অসংখ্য টমেটো। সবকটি গাছেই ফুটেছে হলদে ফুল। আশানুরূপ ফলন হয়েছে টমেটোর। আর মাত্র ৫-৭ দিনের মধ্যেই টমেটো বাজারজাত করা হবে। আরেকপাশে রয়েছে লতা বেগুন ক্ষেত। এখানে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে।

এমনি দৃশ্য দেখা গেছে সুনামগঞ্জের উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের ছাতক-দোয়ারা বাজার সড়কের গোয়ারাই সেতুর পাশেই গড়ে উঠা তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমানের সবুজ কৃষি খামারে। 

তিনি উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর (উনগ্রাম) গ্রামের মরহুম হাজী কাচা মিয়ার সন্তান। তার কৃষি খামার দেখে বন্ধু-বান্ধব ছাড়াও নিজ এলাকা ও এলাকার বাইরের অনেকেই সবজি চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন আর তার কাছ থেকে তারা পরামর্শ নিচ্ছেন। এলাকার বেকার যুবকদের এখন প্রেরণা কৃষি উদ্যোক্তা হিসাবে পরিচিত পেয়েছেন হাবিবুর। 


তিনি ২০১৮ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেছেন। বিভাগীয় শহরে পড়াশোনা শেষ করে ফিরে আসেন গ্রামে। সরকারি চাকরির পেছনে না ঘুরে মনোনিবেশ করেন সবজি চাষে। বছর মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেছিলেন স্বপ্নবাজ যুবক হাবিব। এই পর্যন্ত সব মিলিয়ে সবজি চাষাবাদে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে তার। বর্তমান বাজার মূল্য ঠিক থাকলে এখানের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে প্রায় ৫-৭ লাখ টাকা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার কৃষি খামারের ওপর নির্ভর করে গ্রামের ৮-১০টি পরিবারের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। এভাবেই শুরু হয় আত্মকর্মসংস্থানের। সবজি চাষ করে এখন লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় জৈবিক কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার এই প্রদর্শনীটি করা হয়েছে। কৃষি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে থাই তরমুজের (রকমেলন) চাষাবাদ করবেন বলেও জানান হাবিব। 

তিনি আরো জানান, কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে শৈশব থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিলো। পড়াশোনা শেষ করে যখন দেখলাম বাপ-দাদাদের পুরাতন পেশা কৃষি থেকে গ্রামের অনেকেই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন, তখন স্বপ্রণোদিত ভাবেই আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করার প্রতি মনোনিবেশ করলাম। এ পর্যন্ত পরিবার, বন্ধুবান্ধব, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসসহ সবাই আমাকে উৎসাহিত করেছে। শুরু থেকেই কৃষি অফিসের লোকজন সরেজমিনে এসে আমাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমি সাহস পাচ্ছি। সতেজ ফরমালিনমুক্ত সবজি উৎপাদন করে পারিবারিক চাহিদা মিটানো ছাড়াও দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এরজন্য আমাদের সদিচ্ছা দরকার। আমি মনে করি পড়াশোনা শেষ করে বেকার না থেকে কৃষিতে নিয়োজিত হওয়া দরকার। 

তিনি বলেন, বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখা সম্ভব। কৃষি নিয়ে আমি অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখি।

দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন জানান, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তাকে সব ধরনের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি এতো অল্প সময়ে যেভাবে কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন তা প্রশংসনীয়। তার এই কৃষি খামার সম্প্রসারণে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh