প্রতি লিয়া মং

নূরুননবী শান্ত

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:২৬ পিএম

ভূমিহীন পরিবারের অভাব-অভিযোগের মধ্যে বেড়ে উঠতে উঠতে একদিন স্টেশন বাজারে শ্রীপুরের ট্যাবলেট বেচা ক্যানভাসারের মজমায় শুনলাম- সরকার গহীন পাহাড়ে ভূমিহীন বাঙালিদের জমিজমা দিচ্ছে। আমার দিনমজুর আব্বা পাহাড়ে জমি পাওয়ার নিশ্চয়তার চাইতে নাড়িপোতা গাঁয়ে না খেয়ে মরে যাওয়াকেই সুখের বিবেচনা করলেন। আমি গৃহত্যাগ করলাম। মজমার লোকটা বলেছিল, পাহাড়ের লোকেরা গলা কাটে হাসতে হাসতে; কিন্তু জমি ছেড়ে দেয় সেও ওই হাসতে হাসতে। তবে তো গলা যতক্ষণ না কাটে ততক্ষণ জমির মালিক আমি! চললাম।

হাহাকারে ভরা ক্ষুধার গাঁও পেছনে রেখে কীভাবে কোন পথে পাহাড়ের গহীনে হাজির হয়েছিলাম, মনে পড়ে না। কেবল, লিয়া, তোমাকে বিশেষ করে মনে করার দরকার পড়ে না। যেমন দরকার পড়ে না অনিবার্য নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব বিশেষ করে মনে করার! পাহাড়ের অচেনা পথে হাঁটতে হাঁটতে গহীনে হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম যেন আর ফিরে না আসা সম্ভব হয়! যেন যত ইচ্ছা জমির মালিকানা নিয়ে নিতে পারি সরকারের কাছে চেয়ে। যেখানে পৌঁছেছিলাম, সেখানে মেঘ ঝুলে ছিল বড় বড় পাথরের গা ঘেঁষে। এমন সুন্দরের কাছে মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল। তখন, গুলির শব্দ পেলাম। তক্ষুণি মরতে না চেয়ে পাথরের খাঁজের মধ্যে লুকালাম। গুলি থেমে গেলে পরে খাঁজের মধ্যে পড়েই থাকতাম হয়তো, তোমার দেখা না পেলে।

এই চিঠি যখন লিখছি, পড়ে রয়েছি বিরাট এক নগরের নির্জন কোণে। এখানে জমি কেন, একটি কোণাও জুটবে না মাথা রাখার জন্য। এখানে মরে গেছে আমার জমির আকাঙ্ক্ষা। আমি মরে গেছি সেদিনই, যেদিন মিলিটারি হাসপাতালের ডাক্তার আমার দুই পা কেটে ফেলে আমাকে বাঁচিয়েছে। মৃত জীবন কাটতে পারত ভিক্ষা করে; কিন্তু, রিকি নাহারের মনে হলো তার ভাড়া করা এক কামরার ঘরে একটা পঙ্গু লোক থাকলে তার সহায় হয়। এক রাত গভীরে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আমাকে বলল- চলো, আমার সঙ্গে থাকবা! একটুও না ভেবে চলে এলাম। নির্জন কোণ থেকে যাই না আর কোথাও। মনে হয়, অনড় পড়ে রয়েছি পাহাড়ের মাথায় ঝুলে থাকা মেঘের আড়ালে ঘামতে থাকা কালো কোমল পাথরের খাঁজে অনন্তকালব্যাপী।

কোথা থেকে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা আসে আমার কাছে, চিঠি লিখে নিতে। প্রেমের চিঠি। তার বিনিময়ে ওদের হাত খরচের টাকা আমাকে দেয় কিছু। আমি বেঁচে থাকি। আমার সঙ্গে থাকে রিকি নাহার। শরীর বেচে সে। তাতে রোজগার কিছু হয়। রিকি নাহার আমার সেবাযত্ন করে। আর নানা রকম পুরুষ মানুষের হরেক কিসিমের গল্প করতে করতে আমার জন্য ভাত রাঁধে। এক দুপুরে স্কুলের ব্যাগ ঘাড়ে করে দুই কিশোর রিকি নাহারকে খুঁজতে এসে আমার সামনে পড়ে যায়। আমি ওদের খাতা দেখতে চাই। বাজে হাতের লেখা। আমি ওদের হাতের লেখা সুন্দর করা শিখিয়ে দিই। তারপর আরেক দিন ওরা আসে- চিঠি লিখে নিয়ে আমাকে দুই টাকা দেয়। ঘরে বসে আমার রোজগার শুরু হয়। দিন চলে যায়। দুনিয়া কোনোভাবেই থেমে থাকে না, আমার মতো মৃত মানুষও দেখতে থাকে দুনিয়ার চলমানতা।

একদিন এক কিশোর বলছিল- প্রেম আসলে এক প্রকার দ্বিধা। আমরা ওদের বোঝালাম- প্রেম একটা ধারণামাত্র। এই যে রহস্যময় ছেলেমেয়েগুলো আমাকে দিয়ে প্রেমের চিঠি লেখায়, তা হয়তো প্রেমের জন্য নয়, আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে ওদের একটা অজুহাত। জিজ্ঞেস করেছিলাম- আমাকে দিয়ে লেখাও কেন! ওরা বলে- আসি, আপনার হাতের লেখা একেক দিন একেক রকম। মজা আছে! কিন্তু, আজ কেউ আসেনি। স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ হয়ে আছে ধর্মঘটে। অথচ চিঠিলেখা ছাড়া আমার আর কিচ্ছু করার নাই! তাই, আজ নিজের জন্য চিঠি লিখতে বসেছি। লিয়া মং, চিঠি লেখা আত্মকাম এক প্রকার। তোমার উদ্দেশে লেখা এই চিঠি মরে যাবার আগে রিকি নাহারের কাছে দিয়ে যাব। রিকি নাহার পড়তে লিখতে জানে না! যেমন জানতাম না আমি পাহাড়ে যাবার আগে।
পাহাড়ের গভীর অরণ্যে তুমি, লিয়া মং, আবির্ভূত হয়েছিলে কেচ্ছার পরীর মতো। তোমার সঙ্গে দেখা হবার আগে আমি পুরুষের মতো আচমকা রেগে উঠতাম, গালাগালি করতাম, আর শক্তি দেখানোর জন্য যাকে সামনে পেতাম তারই নাক ফাটিয়ে দিতাম। তোমার সাক্ষাতে সহিষ্ণু হয়েছি।

পাহাড়ের কোনো এক জনহীন পাতার ছায়ার নিচে, বড় পাথরের খাঁজে দিশাহীন পড়ে থাকা আমাকে দেখতে পেয়ে তুমি আমাকে জড়িয়ে ফেললে। দীর্ঘ, সুঠাম দেহ তোমার! তোমাকে দেখেই আওয়াজ করে কথা বলতে ইচ্ছে করল। তোমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিজের পরিস্থিতিকে আমার পারিবারিক ভাষায় গালাগালি করছিলাম ওপরের দিকে মুখ করে। আচমকাই তুমি আমার মুখ চেপে ধরে আমার শ্বাসরুদ্ধ করে দিলে। শক্ত, খরখরে লোহার শিকের মতো তোমার আঙুলের স্পর্শে আমার নাকের হাড় গুঁড়া হয়ে যাবার জোগাড় হয়েছিল। আমাকে টেনে সবচেয়ে বড় পাথরের ওপর নিয়ে গিয়ে তারপর ছেড়ে দিলে, যেন আমি চাইলেও পাথরচূড়া থেকে নিচে নামতে না পারি। তোমার হাত খুব বড়। আমার মুখ, নাক, চোখ, কপাল সম্পূর্ণ ঢেকে গিয়েছিল। যখন চোখ খুলতে পেরেছিলাম, দেখতে পেলাম পাথরের নিচ দিয়ে তীব্র ঝিরি বয়ে যাচ্ছে। স্রোতের ওপর কাঁপছিল তোমার দীর্ঘ ছায়া। ছায়া থেকে চোখ তুলে জঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর বৃক্ষের চেয়েও আকর্ষণীয় তোমার দৃঢ় বাহু, ঘন জঙ্গলের শ্যামল ছায়ায় তোমার গায়ের রঙে শরতের সোনালি রোদের উজ্জ্বলতা, পুরু ঠোঁটে জমে থাকা সূর্যোদয়ের কমলা আলো। তুমি বলেছিলে- এই ঝিরি তিন্দুর কাছে গিয়ে নদী হয়ে যায়। নদীর বুকের ওপর দিয়ে লঙ* বেয়ে মানুষ চলে, নদীর বুক থেকে তুলে নেয় জল, নদী তার বুকে পোষে মানুষের জন্য শতেক খাবার। নদীর ভাষা যদি শিখে যাও, তাহলে বুঝবে কেন বলছি তোমাকে কথাগুলো!

বসলে তুমি আমার পাশে। তোমার বড় বড় দুই চোখে মায়া ছল ছল করে উঠেছিল। বড় পাথরের উত্তরে ছিল এক অচিন বৃক্ষ, বিক্ষত কাণ্ড। তুমি তার নাম বলনি। তা দেখিয়ে বলেছিলে- সহস্র ক্ষত নিয়ে নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকা এই বৃক্ষের পাতা ছিড়ে খায় প্রাণী ও পাখি, ফুল তুলে নিয়ে যায় পাহাড়চর মানুষেরা, এর ফল খেয়ে পরিজনহীন পাহাড়ে কাটানো যায় সারা জীবন, একা। তাই বলি, শান্ত স্বরে কথা কও।

কথাগুলো বলার সময় নিকষ কালো পাথরের ওপর গড়িয়ে পড়েছিল তোমার দু’ফোঁটা অশ্রু! লিয়া মং, সেদিনের কথা মনে করে আমার আজও ভিজে ওঠে চোখ। মন শান্ত হয়। আমি সহিষ্ণু থাকি। তোমার সঙ্গে দেখা হবার মুহূর্তগুলোর মধ্যে অনন্তকাল আটকে থাকি।

তোমার মনে আছে পাহাড়ে সেদিন সারারাত গুলি চলল? তুমি আমাকে অচিন বৃক্ষের ওপরে টেনে তুলে নিয়ে ঘন পাতার আড়ালে শক্ত ডালের ওপর বসে চুপটি করে থাকতে বললে। ভয়ে কাঁপছিলাম যেন পড়ে যাব নিচে। তুমি শঙ্খের মতো সাদা পা দুটি দিয়ে আমাকে আটকে রাখলে ডালের ওপর। বুকে চেপে ধরে রাখলে। তোমার বুকের গভীর থেকে ছড়িয়ে পড়া বুনো গন্ধে সন্ত্রস্ত আমার কম্পন থেমে গেল। আমি সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এক অসহনীয় নিস্তব্ধতার মধ্যে যখন আমার ঘুম ভেঙে গেল, তখন আদিম অন্ধকার। তুমি ফিস ফিস করে বলেছিলে- পাহাড়ের রাত কোনোদিন এতটা নিস্তব্ধ হয় না। নানা রকম শব্দের বাদ্য বাজে। কত যে কীটপতঙ্গের গান চলে ইয়ত্তা নাই; কিন্তু সেদিন থেকে বদলে গেল সব, যেদিন ঝিরি থেকে জল আনতে গিয়ে মা আমার গুলি খেয়ে একা একা মরে গেল। ভেবেছিলাম মিজোরাম চলে যাব, যেমন গিয়েছে ফিরে আমাদের গোষ্ঠীর কতজন; কিন্তু মায়া হয় এই ঝিরির জন্য! পাহাড়ে দখল কায়েম রাখার খুনোখুনির লজ্জায় এই ঝিরি লাল হয়ে ওঠে। মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মানুষ কি পাহাড় রক্ষা করতে পারে, নাকি পাহাড়ই রক্ষা করে মানুষকে?

মা বলেছিল, সে কথা পাহাড় জানে! পাহাড় আমাদের মালিক। আমি ভেবেছিলাম, কান পাতলে পাহাড়ের কথা শোনা যাবে; কিন্তু পাহাড়ের মালিক হওয়া নিয়েই তো গুলি চলে। পাহাড় তাই রুষ্ট, কথা সে বলে না, এমন অভিমান! তারপর, মা মরে গেল, তাই আর জানতে পারিনি পাহাড়ের কথা কিভাবে শুনতে হয়। আমরা গুলির ভয় দেখিয়ে বশ করতে চাই ঝিরি বয়ে যাওয়ার শব্দ পর্যন্ত। গুলির শব্দের ওপর দিয়ে ঝিরি বয় সংগীতের মতো করে! কেবল পাখিগুলো উড়ে চলে যায়। পাহাড়ের বৃক্ষরাজি কাঁদে পাখিগুলোর জন্য। আমি ওদের বেদনা দেখতে পাই। ঝিঁ ঝিঁ পোকা পর্যন্ত পাহাড়ের মাটির গভীরে ঢুকে গিয়েছে। ভয়ে চুপ। আমাদের পাহাড়-ইশ্বর দেখে, জানে- বলেও; আমরা কিছুই শুনতে পাই না। তুমি বরং ফিরে যাও, তোমার অভাব-অভিযোগের জীবনে! কিন্তু, আমি পেছনে ফিরতে চাইনি। বলেছিলাম, মেঘগুলো ফিরে এলে আমাকে বরং হত্যা করে ঝিরিতে ফেলে দিও।
 
তারপর, অন্ধকারে, বৃক্ষ থেকে নেমে নিঃশব্দে তুমি আমার হাত ধরেছিলে। কানে এসে লাগছিল ঝিরির স্রোতের সংগীত। আতঙ্কের ভেতরে ঝিরি প্রবাহের গান যেন মনে হয়েছিল জীবনের স্পষ্ট সাহস। বলেছিলাম তোমাকে সে কথা। বলেছিলাম, উত্তর বাংলার তীব্র অভাবের মধ্যে জীবনের প্রতি হারিয়ে ফেলা উত্তেজনা তুমিই ফিরিয়ে দিলে, কোনো অস্ত্রেই এর বিনাশ সম্ভব নয়! আমার কথা শুনে, আমার হাতে একটি লিফলেট দিয়ে তুমি বললে পড়তে। আমি অক্ষর চিনি না! শুনে তুমি আমাকে বাংলা লিখতে শেখালে, যাতে আমি পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়া লিফলেটগুলো পড়তে পারি, যাতে আমি ভয় পাই। আমি পড়তে শিখেও ভয় পেলাম না। বরং তোমাকে ভালোবাসার কথা বললাম। চুম্বন করলাম। সঙ্গম করলাম। তোমার শক্ত, খরখরে লোহার শিকের মতো লম্বা আঙুলগুলো অবশেষে মনে হলো কালো পাথরের মতো মসৃণ, পিচ্ছিল, কোমল। ঘুমিয়ে পড়লাম তোমার বুকের ওপর। আমি ভুলে গেলাম যে আমি পাহাড়ে গিয়েছিলাম জমির মালিক হতে! জেগে উঠলাম হঠাৎ গুলির শব্দে। চিৎ হয়ে পড়েছিলাম একা পাহাড়ের গায়ের ওপর। তুমি কোথাও নেই! সব বৃক্ষের পাশে তোমাকে দেখি, আর কাছে গিয়ে শূন্যতা আবিষ্কার করি। কেচ্ছার পরীর মতোই তুমি হয়তো আকাশের ওপারে উড়ে গিয়েছ!

একদিন, ক্লান্ত হয়ে সবাই পাহাড়ে শান্তির কথা বলতে লাগল যখন, বলতে লাগল যে পাহাড়ের আর দুঃখ নেই- কেবল উন্নয়ন, সংরক্ষণ, শিক্ষা, শান্তি ও ধন-সম্পদ বাড়তে থাকবে পাহাড়ে পাহাড়ে, তখন রূপকথার চরিত্রের মতো অবিকল তোমার আদলের কিশোরী তিআ মংকে দেখলাম থানচিং বাজারে। কাছে গিয়ে তাকে বললামÑ তোমার বাবা কে? সে বলল- **কং জ বঞং এ কথাই জানতে চেয়েছিল আমার মায়ের কাছে। আমার মায়ের তখন কথা বলার শক্তি ছিল না। আমার সমাজের মানুষ বলে, আমি পাহাড়ের সন্তান। তারা আরও বলে, একদিন আমার মা আকাশের ওপারে উড়ে গিয়েছে; কিন্তু তোমার কি চাই? কেন জানতে চাচ্ছ?

তারপর, পেছন থেকে কে যেন আমার চোখ বেঁধে ফেলল। পিছমোড়া করে হাত বাঁধলো। আবারও গুলির শব্দ হলো। কে যেন বলল- জমির মালিক হইতে আসছ তুমি, তাই না? তোমাকে আমরা পাহাড়ের মাটির নিচে থাকার জমিন দিব! আমাকে ঠেলে ঠেলে কোথাও নিয়ে যাওয়া হলো। ঝিরি বয়ে যাবার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কেউ একজন তিআকে নাম ধরে ডেকে থপ থপ করে হেঁটে গেল অন্যদিকে। আবারও গুলির শব্দ হতে থাকল। অনেকক্ষণ ধরে। কয়েকটা চিৎকার শুনতে পেলাম। একবার তোমার নাম ধরে চিৎকার করলাম- লিয়াআআ। তখনই, দুই হাঁটু ভেঙে পড়ে গেলাম একদিকে। আমার মাথা ধাক্কা খেল পাথরের সঙ্গে। আমার দু’চোখ বুঁজে এলো। উঁচু পাহাড়ের ওপর মেঘগুলো ফিরে এসেছিল কিনা তা আর জানা হয়নি। হাসপাতালের বিছানায় যেদিন উঠে বসতে পেরেছিলাম, মিলিটারির লোকেরা আমাকে মনে করতে বলেছিল, কি হয়েছিল? তোমার পরিবার-পরিজনের ঠিকানা কি? এতটা গভীরে কেন গিয়েছিলে?

আমার কথা বলতে ইচ্ছে করেনি। বলেছি- কিছু মনে পড়ছে না। আমার মুখের দিকে ভালো করে তাকালে নিশ্চয় ওরা তোমাকে দেখতে পেত, লিয়া! আমার চোখে কি তোমার ছবি নেই! রিকি নাহার আমাকে একটি আয়না এনে দিয়েছিল। আয়নায় চোখ রাখলে আমি তো ঠিক দেখতে পাই- তোমাকে! মরে গিয়েও, তাই, বেঁচে আছি, তোমাকে চিঠি লিখছি, এই নগরের সহস্র দেয়ালের জঙ্গলের এক নির্জন কোণে বসে। যেন অনড় পড়ে রয়েছি পাহাড়ের মাথায় ঝুলে থাকা মেঘের আড়ালে ঘামতে থাকা কালো কোমল পাথরের খাঁজে অনন্তকালব্যাপী। মিলিটারির এক অফিসার, শেষে, আমার হাতে হাসপাতালের ছাড়পত্র আর কিছু টাকা দিয়ে বলেছিল- সাবধানে থাকবেন। হা! মৃত মানুষের সাবধানতা! রিকি নাহার বলে- প্রত্যেকদিন নতুন নতুন মানুষের মুখ পড়তে পড়তে উত্তেজনা জাগে, কাগজের লেখা পড়ে কি আর তেমন উত্তেজনা সম্ভব? রিকি নাহারের কাছে এই চিঠি রেখে যাব। ও পড়তে পারবে না। শুনতে পাচ্ছি মানুষের আর চিঠি লেখার দরকারই হবে না কোনোদিন।
* কং জ বঞং = গোত্রপতি
** এক প্রকার নৌকা

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh