রোহিঙ্গারা না ফিরলে বাংলাদেশের সমূহ বিপদ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২১, ০২:৫৮ পিএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:০৯ পিএম

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী রোহিঙ্গারা নিজ দেশেই ফিরে যাবেন। কারণ তা না হলে আমাদের জন্য সমূহবিপদ। অনেকদিন এতগুলো মানুষ থাকলে তারা যদি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়ায় তাহলে সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর, মায়ানমারের জন্যও ক্ষতিকর।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সমস্যাটি কেবল আমাদের একক সমস্যা না, এটি গ্লোবাল সমস্যা। আমরা এটা বিশ্বাস করি, স্থায়ী সমাধান হিসেবে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। তারা ফিরে যাবে বলেই আমরা এখনো আশাবাদী।’

সোমবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুতুপালং একটি পাহাড়ি এলাকা, আমরা পাহাড়ধসসহ নানা ঝুঁকি এড়াতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের। সেখানে ১ লাখ লোক যেখানে ২২-২৩ হাজার পরিবারকে স্থানান্তর করা হবে। এতে ভাসানচরে যেমনি তারা শান্তিতে থাকবে। এখানকার রোহিঙ্গারাও আগে থেকে ভালো থাকবে। ভাসানচরে গেলে রোহিঙ্গারা মায়ানমারে যেমন তারা মাছ ধরত, কৃষি কাজ করত সেটি করতে পারবে। কিছু ইকোনমিক এক্টিভিটিতে আমরা তাদের নিয়োগ করব, তাতে তাদের সন্ত্রাসী হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রথমে আমরা ১৬৪২ জনকে ভাসানচরে নিয়ে গেছি। তবে অনেক দীর্ঘায়িত হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেখানে যেতে রাজি নয়। তারা এটাকে ইস্যু করে, কিন্তু আমরা তো মানুষের মঙ্গল চাই। এখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি তাদের মঙ্গলের জন্য।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচরে এখন রোহিঙ্গারা গেছে, আনাগোনা বাড়ছে। সপ্তাহে এখন দুটি স্টিমার শনিবার ও বুধবার সেখানে যাচ্ছে। প্রথমে যারা ভাসানচর গেছে, তারাই এখন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সেখানে যেতে বলছে। আমরা ভেবেছি ৭ থেকে ৮০০ হবে, পরে দেখি প্রায় ১৮০০ অধিক রোহিঙ্গা। পরে তাদেরও আয়োজন করে ভাসানচরে নেয়া হয়েছে।’


আন্তর্জাতিক নেতিবাচক প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার সকলের দায়-দায়িত্ব নির্যাতিত লোকদের সাহায্য করা। আপনারা বড় বড় বড় বক্তব্য দেবেন; কিন্তু আপনারা কেন এসে তাদের নিলেন না? আমরা এতলোককে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা রোহিঙ্গাদের ভালো অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছি। ভাসানচরে তাদের স্থানান্তর করেছি, এটি সারা বিশ্বে মডেল। দুনিয়ার কোথাও উদ্বাস্তুদের এভাবে শান্তিতে রেখেছে?’

এর আগে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি, সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. ইফতেকুর রহমান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ, জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান মো, নূরুল আলম নিজামী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাডভেঞ্চার না হলে জীবনের প্রাপ্তি নেই। আমাদের নতুন প্রজন্ম ইস্পাত লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার। এজন্য ত্যাগের দরকার, সোনার মানুষ হতে হবে। বাংলাদেশে খুবই ভাগ্যবান জাতি। এদেশে ইয়াং লোকের সংখ্যা বেশি। আগামী ১৫ বছর আমাদের ইয়াং লোক বাড়তেই থাকবে। তাই আমাদের আত্ম-প্রত্যয় থাকলে জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা। অ্যাডভেঞ্চার হতে হলে ইচ্ছা শক্তি ও প্রত্যয় করুন। স্থানীয় পর্যায়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে চাকরি- কর্মসংস্থান বাড়বে। তাই আপনারা নিজেদের স্বপ্নটাবে বড় করুন। স্বপ্ন বড় করে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’


আয়োজকরা জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব। এই উৎসবে পর্বতারোহণ, নৌ-বিহার, কায়াকিং, হাইকিং ও ট্রেইল রান, টিম বিল্ডিং, ট্রেজার হান্ট, ট্রেকিং, ক্যানিওনিং, ট্রি ট্রেইল, রোপ কোর্স, জিপলাইন, রেপলিং, দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন ও কেভ ডিসকভারী ইভেন্টসমূহে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় এক অন্যরকম ক্রীড়া অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা অর্জন করবে অ্যাডভেঞ্চাররা। উৎসবে তিন পার্বত্য জেলা থেকে ৫০ জন এবং দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ৫০ জনসহ সর্বমোট ১০০ জন অংশগ্রহণ করছেন। যাদের প্রত্যেকেই ১৮-৩৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষ। এর মধ্যে রাঙামাটি থেকে ২০, খাগড়াছড়ি থেকে ১৫ ও বান্দরবান থেকে ১৫ জন অংশগ্রহণ করছেন। সমাপনী দিন ১৫ জানুয়ারি রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাতটায় ফানুস উড়ানো ও আতশবাজি প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সাঙ্গ হবে। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।


এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো- জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের অংশ হিসেবে এই অঞ্চলের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং মুজিব বর্ষ উদযাপনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করা। রোমাঞ্চপ্রিয় তরুণদের উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারমূলক কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধকরণ। তরুণদের মধ্যে শৃঙ্খলা, পরোপকার, সহনশীলতাসহ বিভিন্ন মানবিক গুণের বিকাশ ঘটানো। চ্যালেঞ্জিং বিভিন্ন ইভেন্টে তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ী ও উদ্যমী যুবসমাজ গড়ে তোলা।

অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে সাহস ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা এবং পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো ও এ অঞ্চলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করে তোলা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh