জৌলুস হারিয়ে জীর্ণদশা শেবামেকের জাদুঘর

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ১০:১৮ এএম

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবামেক) একমাত্র মিউজিয়ামটি আজ জীর্ণদশায় পতিত হয়েছে। এক সময় এ মিউজিয়ামে মানবদেশের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে সাজানো ছিলো। আজ তা কেবলই স্মৃতি। পরে আছে শুধু অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রদর্শনের গ্লাস যুক্ত বহুকালের পুরোনো শোকেস, জার, সার্কুলার গ্লাস আর বিভিন্ন ধরনের মডেলগুলো।

পাশাপাশি বহুকালের পুরানো মানবদেহের ব্রেন, হার্ট, লাঞ্চ, লিভার, স্টোমাক, কিডনি, লার্জিং স্টাইন, ওভারিসহ কিছু অঙ্গ-প্রতঙ্গের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। তাও বছরের পর বছর প্রিজারভেটিভ দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম।

অভিযোগ উঠেছে, ‘অযত্ন-অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা লগ্নের এই এনাটামি মিউজিয়ামটি আজ জৌলস হারিয়ে জীর্ণদশায় পতিত হয়েছে। এর পেছনে কলেজ এবং গণপূর্ত বিভাগের উদাসিনতার পাশাপাশি ঠিকাদারের অনিয়মকেও দায়ি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় এ বিভাগের অধিনে একটি মিউজিয়াম (জাদুঘর) চালু করা হয়। শুরুর দিকে বিভাগটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ মানবদেহ, মানুষের কঙ্কাল এবং মানবদেহের ব্রেন, হার্ট, লাঞ্চ, লিভার, স্টোমাক, কিডনি, লার্জিং স্টাইন, ওভারি, পেনিস, চক্ষুসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যক্ষ কাচের গ্লাসে সাজিয়ে রাখা হয়।

এগুলো প্রদর্শনের জন্য রয়েছে ২০টির মতো কাঠের শোকেস। যার চারদিক কাচের গ্লাস দিয়ে ঘেরা। এসব সামগ্রী এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখভালের জন্য রয়েছে কর্মচারীর ব্যবস্থা। বিভাগটিতে প্রতিদিন মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি ব্যবহারিক কাজ করানো হয়ে আসছে।

এ বিভাগের দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, ‘বিভাগটিতে প্রতিষ্ঠা লগ্নে যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং মানবদেহ সংযোজন করা হয়েছিল। যা প্রতিষ্ঠার এক যুগের মধ্যেই ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়। বর্তমানে অর্ধশত বছর পার করেছে মেডিকেল কলেজ। কিন্তু অ্যানাটমি বিভাগের মিউজিয়ামে নতুন করে কোন মরদেহ, কঙ্কাল বা মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যুক্ত হয়নি।

তারা বলেন, এই বিভাগটি’র এখন আধুনিকায়ন জরুরি। প্রতি বছর শেবামেক এর আধুনিকায়ন, সংস্কার এবং উন্নয়নখাতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু মিউজিয়ামটি’র আধুনিকায়নে উদ্যোগ নিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ।

তবে বছরের শেষ কিংবা শুরুর দিকে কলেজ এবং গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদারের মাধ্যমে বিভাগটিতে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হলেও মিউজিয়ামের আধুনিকায়ন বা সংকট নিরসনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবার সংস্কার কাজও রং আর ছোটখাটো নামমাত্র কাজ করেই পুরো বরাদ্দ হজম করে নিচ্ছেন ঠিকাদার।

সরেজমিনে জানা গেছে, ‘দেশে মহামারি করোনা সংক্রমণের শুরুতেই মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এখনও বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। যার কারণে দীর্ঘ মাস ধরে অ্যানাটমি বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাস হচ্ছে না মিউজিয়ামে। বন্ধ থাকছে মিউজিয়ামের তালা। ফলে ধুলা-বালি আর মাকর্সার জালে জড়িয়ে জীর্ন দশায় পরিণত হয়েছে মিউজিয়ামটি।

শেবামেকের অ্যানাটমি মিউজিয়ামটি দ্রুত আধুনিকায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছেন এখানকার সাবেক কিউরেটর ডা. রইচ আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘১৯৭৯ সালে স্থাপিত এ মিউজিয়ামটি একটি আকর্ষণীয় স্থান ছিল। ২০০৭ সালে আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে উন্নয়ন কিংবা আধুনিকায়ন সম্ভব হয়নি। একারণেই মিউজিয়ামটি আজ জীর্ণদশায় পতিত হয়েছে।

এদিকে, অ্যানাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. চন্দনা সরকারও বলছেন বিভাগটির আধুনিকায়ন খুবই জরুরি। কেননা একটি মিউজিয়াম যেভাবে থাকা উচিত সেভাবে এটি নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধীরে ধীরে জীর্ণদশায় পরিণত হয়েছে। আমরা চাই- মিউজিয়ামটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হোক। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রাখা উচিত বলেও মনে করেন এই শিক্ষক।

তবে উন্নয়ন এবং সংকট নিরসনে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়েছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এর অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এস.এম সারওয়ার। তিনি বলেন, ‘মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠার পরে এখানে প্রদর্শনের জন্য ইংল্যান্ড থেকে মানবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ উপহার আসে। সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোই এখনো রয়েছে। তাছাড়া কেউ মৃতদেহ স্বেচ্ছায় দান না করায় নতুন মৃতদেহ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।

মিউজিয়ামের আধুনিকায়নে কর্তৃপক্ষ একমত দাবি করে কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটি আধুনিকায়ন বা সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তারা যেভাবে চাহিদা দিবে আমরা সেভাবেই মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠাবো। পাশাপাশি এর উন্নয়নে যতোটুকু সম্ভব করা হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh